গ্রন্থাগারে পরিচালন সমিতি গঠনে আর নির্বাচন হবে না। আঞ্চলিক গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ, বিডিও, মহকুমাশাসক, পঞ্চায়েত সমিতি ও পুরসভা কর্তৃপক্ষ সদস্যদের মনোনীত করবেন। গ্রন্থাগারের সভাপতি, সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদকের মতো পদাধিকারীদেরও মনোনীত করা হবে।
সম্প্রতি রাজ্য থেকে জেলায় এই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদে নতুন নিয়মে পরিচালন সমিতি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক প্রবোধ মাহাতোই নদিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী দুই জেলায় গ্রন্থাগারগুলির পরিচালন সমিতির গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার এই নির্দেশে অবশ্য খুশি নন অনেকেই। যেমন পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির নদিয়া জেলা সম্পাদক অশোক সিংহ মহাপাত্রের মতে, ‘‘গ্রন্থাগার হল গণতন্ত্রের আঁতুরঘর। সেই গণতন্ত্রকে ধংস করতেই বর্তমান সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে গ্রন্থাগার পরিচালনায় সমস্যা হবে।’’ তাঁর আশঙ্কা, সদস্য মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে শাসকদল তার পেটোয়া লোকজনকে পরিচালনার মাথায় বসাবে। তৃণমূলের কর্মচারী ফেডারেশন অনুমোদিত বঙ্গীয় সাধারণের গ্রন্থাগার কর্মী ও কল্যাণ সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মহম্মদ ফারুখ অবশ্য পাল্ট বলেন, ‘‘এর ফলে গ্রন্থাগারগুলি রাজনীতি-মুক্ত হবে। নির্বাচন করার জন্য যে বাড়তি খরচ হত, তা-ও বাঁচবে।”
জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে জানা যায়, আগে জেলা গ্রন্থাগারের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার আধিকারিক সভাপতি এবং গ্রন্থাগারিক সম্পাদক হতেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে পরিচালন সমিতির যুগ্ম সম্পাদক হতেন। আবার গ্রামীণ, শহর ও মহকুমা গ্রন্থাগারের ক্ষেত্রে নির্বাচিতরা পরিচালন সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক হতেন। গ্রন্থাগারিক হতেন যুগ্ম সম্পাদক।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ গ্রন্থাগার আইন (১৯৭৯)-এ সংশোধনী এনেছে। গত মে মাসে সেই সংশোধনীর প্রতিলিপি জেলায় জেলায় পাঠিয়ে তা কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা, মহকুমা, শহর ও গ্রামীণ গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, সভাপতি কিংবা সদস্য কত জন ও কারা হবেন, তা তাতে পরিষ্কার করে বলা আছে। যেমন জেলা গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির সদস্য হবেন ১৬ জন। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক হবেন সভাপতি, গ্রন্থাগারিক হবেন সম্পাদক। জেলার মাস এডুকেশন অফিসার, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ, পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতি এক জন করে এবং আঞ্চলিক গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ (লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি অর্থাৎ এলএলএ) শিক্ষা-সংস্কৃতি জগৎ থেকে দু’জন সদস্যকে মনোনীত করবেন। ওই দু’জনের মধ্যে থেকে এক জন যুগ্ম সম্পাদক হবেন। সভাপতি এবং গ্রন্থাগারিক ছ’জনকে মনোনীত করবেন গ্রন্থাগার সদস্যদের মধ্যে থেকে। যাঁরা গ্রন্থাগার ব্যবহার বেশি করেন, গ্রন্থাগারের কর্মসূচিতে যোগ দেন, তাঁরাই প্রাধান্য পাবেন।
মহকুমা ও শহর গ্রন্থাগারের ক্ষেত্রে সম্পাদক হবেন গ্রন্থাগারিক। সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদককে মনোনীত করবেন এলএলএ। বিডিও, মহকুমাশাসক, পঞ্চায়েত সমিতির মনোনীত সদস্য ছাড়াও গ্রন্থাগারের সদস্যদের মধ্যে চার জনকে মনোনীত করবে এলএলএ। গ্রামীণ গ্রন্থাগারের ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির সভাপতি ও সম্পাদককে মনোনীত করবে এলএলএ, যুগ্ম সম্পাদক হবেন গ্রন্থাগারিক। ব্লক অফিস ও পঞ্চায়েত সমিতি এক জনকে মনোনীত করবে। এলএলএ গ্রন্থাগারের তিন সদস্যকে মনোনীত করবেন। সব পরিচালন সমিতিতেই গ্রন্থাগারের আজীবন সদস্যেরা থাকবেন।
কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরিতে যে নতুন কমিটি গড়া হচ্ছে, তার জন্য যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে স্বদেশ রায়কে, সভাপতি হচ্ছেন সুবীর সিংহরায়। স্বদেশবাবু দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রন্থাগারের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে আছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা: এমনিতে আগে সদস্য আসত না, অথচ ভোটের ঠিক আগে সদস্য বেড়ে যেত। এটা পরিকল্পিত ভাবে করা হত। যাঁরা গ্রন্থাগারের আসতেনই না, তাঁরাই ওই নির্বাচনের জোরে গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির মাথায় বসতেন। স্বদেশবাবুর মতে, ‘‘এত দিন গ্রন্থাগারে যে রাজনীতি হত, নতুন নিয়মের ফলে তার ইতি ঘটবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy