Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতাল দেখতে এসে হতাশ এসডিও,  বললেন দুর্ভাগ্যজনক

সাড়ে ১১টাতেও আসেননি ওয়ার্ড মাস্টার। বেবি কটে না রেখে প্রসবের পরে মায়েদের সঙ্গেই সদ্যোজাতকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অপরিসর ট্রলিতে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

নীল বোর্ডে লেখা ‘সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটাল’, তবে তা যে নিছক নামেই বুধবার জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল পা দিয়েই মালুম হয়েছে মহকুমাশাসকের।

বহির্বিভাগে কয়েকশো ন্যূব্জ রোগী। ঘড়িতে পৌনে ১১টা কিন্তু কোনও চিকিৎসকের দেখা নেই।

সাড়ে ১১টাতেও আসেননি ওয়ার্ড মাস্টার। বেবি কটে না রেখে প্রসবের পরে মায়েদের সঙ্গেই সদ্যোজাতকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অপরিসর ট্রলিতে।

অবাক হয়ে মহকুমাশাসক কীর্তিকা শর্মা তাই বলেই ফেললেন, ‘‘এক্সট্রিমলি আনফরচুনেট, এ ভাবে হাসপাতাল চলে!’’ রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রশাসনিক কর্তা তাই সোমবার হাসপাতালের সুপার, চিকিৎসক এবং রোগী কল্যাণ সমিতির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।

জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ৩৩১টি শয্যা, জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রয়েছে ৩০০। জঙ্গিপুরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি বছরখানেক আগে চালু করা হয়েছে মহকুমা হাসপাতালের কয়েকটি বহির্বিভাগ ও প্রসূতি অন্তর্বিভাগকে সেখানে তুলে নিয়ে গিয়ে। তবে তা এখনও চলছে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল নামেই।

এ দিন সেই হাসপাতাল দেখতে যান মহকুমাশাসক। বেলা তখন সাড়ে ন’টা। সটান ঢুকে পড়েন জরুরি বিভাগে। দেখেন, কোনো চিকিৎসক নেই। দোতলায় উঠে দেখেন গোটা হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে পড়ে রয়েছেন অসংখ্য রোগী। সেখান থেকে সোজা যান সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনের বহির্বিভাগে। সেখানে চক্ষু বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে শতাধিক রোগী। ঘড়িতে পৌনে ১১টা , তবু চিকিৎসকের দেখা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর আসার কথা সকাল ন’টায়। প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের সরলা গ্রামের আসামুদ্দিন সেখের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আসামুদ্দিন বলতে শুরু করেন, ‘‘তিন দিন ধরে ঘুরছি ডাক্তারই আসেন না।’’

প্রসূতিদের বহির্বিভাগেও একই চেহারা, শ’দেড়েক মহিলা দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষায়। কিন্তু চেম্বার ফাঁকা। ধৈর্যহারা মহকুমাশাসক এ বার ঘন ঘন মাথা নাড়তে থাকেন।

প্রসূতি বিভাগের দিকে এগোতেই সুতির হাসানপুরের তানজেরা বিবি তাঁর কাছে এগিয়ে আসেন, ‘‘ম্যাডাম, আমার বোনটা তিন দিন ধরে ছটফট করছে কোনও ডাক্তার দেখছে না!’’

হঠাৎই তাঁর নজরে পড়ে প্রসূতি বিভাগে সদ্যোজাতদের যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। ওয়ার্ডের মধ্যে ঢুকে এক নার্সকে ডেকে দেখান তিনি, ‘‘এটা কি হচ্ছে বলুন তো!’’ সুপার স্পেশ্যালিটি থেকে বেরিয়ে তিনি যান হাসপাতালের রান্নাঘরে। রোগীদের মেনু চার্ট কোথায়? অফিসে টাঙানো রয়েছে, কেউ এক জন জানান, কিন্তু তার দেখা মেলেনি।

এ বার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি কীর্তিকা শর্মা, ‘‘এক্সট্রিমলি আনফরচুনেট! সোমবারই ডাকুন, এ ভাবে চলতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE