Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
আবাসনে সিবিআই হানা

ঘুষ নিয়ে পাকড়াও টেলিফোন কর্তা

কর্তা ঘুষ ছাড়া বিল পাশ করতেন না। প্রতি মাসেই চাহিদা মতো টাকা দিতে হতো। বিএসএনএল অফিসারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাছে এমন অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক গাড়ির ঠিকাদার।

বিএসএনএল দফতরে সিবিআই

বিএসএনএল দফতরে সিবিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

কর্তা ঘুষ ছাড়া বিল পাশ করতেন না। প্রতি মাসেই চাহিদা মতো টাকা দিতে হতো। বিএসএনএল অফিসারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাছে এমন অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক গাড়ির ঠিকাদার। আগাম ফাঁদ পেতে ঘুষের ১০ হাজার টাকা-সহ ওই কর্তাকে আটক করল সিবিআই।

বৃহস্পতিবার সকালে কৃষ্ণনগরে বিএসএনএলের প্রধান জেলা অফিস লাগোয়া আবাসনে হানা দেয় সিবিআইয়ের ১৩ জনের একটি দল। সেখান থেকেই পাকড়াও করা হয় বিএসএনএলের টেলিকম ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার (টিডিএম), তামিলনাড়ুর মাদুরাই থেকে আসা এক্স অ্যান্টনি রাজকে। তাঁকে বিএসএনএলের জেলা প্রধান দফতর নক্ষত্র ভবনে নিয়ে গিয়ে দিনভর তল্লাশি চালানো হয়। আবাসন এবং অফিস থেকে আটক করা হয় বেশ কিছু নথিপত্র। গভীর রাত পর্যন্ত তাঁকে জেরা করা হয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বিএসএনএলের সদর দফতর এবং জেলার সব অফিস মিলিয়ে ১২টি গাড়ি ভাড়ায় খাটে। দরপত্রের মাধ্যমে ১২টি গাড়ি দেওয়ার বরাত পেয়েছেন কৃষ্ণনগরের খোড়োপাড়ার বাসিন্দা শিবু হালদার। ভাড়া বাবদ মাসে প্রায় দু’লক্ষ টাকার বিল হয়। বছর আড়াই আগে অ্যান্টনি নদিয়ায় টিডিএম হয়ে আসেন। শিবুর অভিযোগ, গত দেড় বছর ধরে প্রতি মাসে বিল পাশের সময়ে টিডিএম তাঁর কাছ থেকে ১০-২০ হাজার টাকা চাইতেন। ঘুষের চাহিদা দিন-দিন বাড়ছিল। গত তিন মাসের বিল এখনও পাশ করেননি টিডিএম। তাই দিন পনেরো আগে শিবু সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হন।

অভিযুক্ত এক্স অ্যান্টনি রাজ ও অভিযোগকারী শিবু হালদার

বিএসএনএলের অফিসে সিবিআই হানা কিন্তু নতুন কিছু নয়। গত দশ বছরে দুর্নীতির অভিযোগে এই নিয়ে চার বার এই অফিসে সিবিআই হানা দিল। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে বিএসএনএলের নদিয়ার জিএম, ডিজিএম-সহ কয়েক জন অফিসার তাদের হাতে ধরা পড়েছেন।

শিবুর অভিযোগ পাওয়ার পরেই সিবিআই অ্যান্টনিকে হাতে-নাতে ধরার ছক কষে। বুধবার রাতে তাদের অফিসারেরা কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসে ওঠেন। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ তাঁরা চলে আসেন বিএসএনএল অফিসের কাছে। তাঁরাই শিবুর হাতে ১০ হাজার টাকা দিয়ে টিডিএমের আবাসনে পাঠিয়ে পিছু নেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, টিডিএমের হাতে শিবু টাকা দিতেই পিছন থেকে গিয়ে সিবিআই অফিসারেরা তাঁকে বমাল ধরে ফেলেন।

এত দিন পরে হঠাৎ সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ ঠুকলেন কেন? শিবুর দাবি, প্রতি মাসে বিলের টাকা পেলে তবেই তিনি চালকদের বেতন দিতে পারেন। তাই বাধ্য হয়ে বিল পাশ করাতে ঘুষ দিতেন। কিন্তু টিডিএমের চাহিদা ক্রমশ তাঁর সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছিল। ‘‘তাই আমি সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করি’’ —বলেন শিবু।

কিন্তু শিবু হালদার এবং তাঁর কাজ-কারবারকেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখছেন না গোয়েন্দারা। বিএসএনএল সূত্রের খবর, গত ৩৫ বছর ধরে ওই সংস্থায় গাড়ির ঠিকাদারি করছেন শিবু ও তাঁর ছেলে বিধান হালদার। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন করে দরপত্র ডাকা হয়। সে ক্ষেত্রে গাড়ির ঠিকাদারি শুধু তাঁরাই পাচ্ছেন কী করে? শিবুর বক্তব্য, ‘‘আমার কাগজপত্র সব ঠিক রয়েছে। নিয়ম মেনেই বরাত পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BSNL Official Arrest Bribe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE