Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
উদ্ধার হল হাওড়া থেকে

আশ্রয় চেয়ে শিশু অপহরণ বহরমপুরে

নাটক করেও শেষ রক্ষা হল না। শেষ পর্যন্ত পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়ল অপহরণকারী। শনিবার রাতে হাওড়া স্টেশনের ন’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ইয়াসমিন খাতুন ওরফে রেশমি বিবি নামে ওই অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে বহরমপুর থানার পুলিশ। ধৃতের বাড়ি বীরভূমের পাড়ুইয়ের পুরন্দরপুর গ্রামে। ধৃতকে ওই রাতেই গাড়িতে চাপিয়ে বহরমপুরে আনা হয়েছে।

ধৃত রেশমি বিবি।

ধৃত রেশমি বিবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

নাটক করেও শেষ রক্ষা হল না। শেষ পর্যন্ত পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়ল অপহরণকারী। শনিবার রাতে হাওড়া স্টেশনের ন’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ইয়াসমিন খাতুন ওরফে রেশমি বিবি নামে ওই অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে বহরমপুর থানার পুলিশ। ধৃতের বাড়ি বীরভূমের পাড়ুইয়ের পুরন্দরপুর গ্রামে। ধৃতকে ওই রাতেই গাড়িতে চাপিয়ে বহরমপুরে আনা হয়েছে। রবিবার বহরমপুরের সিজেএম আদালতে ধৃতকে তোলা হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী বিশ্বপতি সরকার জানান, ওই মহিলার বিরুদ্ধে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম খালেদা মাল্লান ধৃতকে ১৪ দিনের জেলা হেফাজতের নির্দেশ দেন।

নবগ্রামের জয়কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা সালমা বিবি তাঁর পাঁচ বছরের শিশুপুত্র আরিফ শেখকে নিয়ে বহরমপুরের খাগড়াঘাট রেলগেটের কাছে শিয়ালমারি গ্রামে মাসি করিমা বেওয়ার বাড়িতে আসেন। শুক্রবার গভীর রাতে ওই বাড়িতে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ এক মহিলা এসে রাতটুকু থাকতে চান। বিধবা করিমা বেওয়া জানান, অত রাতে এক মহিলা যদি বলল তার কোনও আশ্রয় নেই। শেষ বাস ছেড়ে গিয়েছে। রাতে সে এখানে থাকতে চায়। তখন তাকে থাকতে দেওয়া হয়। দেখেও মনে হয়েছিল মহিলা ভদ্র ঘরের। শনিবার সকালে দেখেন নাতি নেই। বেপাত্তা ওই মহিলাও। তখন তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ ওই মহিলা অন্ধকার থাকতেই পাঁচ বছরের আরিফকে নিয়ে পালায়।

যাওয়ার সময়ে ওই মহিলা সামলা বিবির মোবাইল নম্বর নিজের মোবাইলে ‘সেভ’ করে। পরে দিনের আলো ফুটতেই সালমা বিবির মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ৪০ হাজার টাকা ও তিন ভরি সোনা দাবি করে ওই মহিলা। অভিযোগ পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ ওই মহিলার মোবাইল ‘ট্র্যাক’ করতে শুরু করে। আর ফোন করলেই সালমা জানান, তিনি মুক্তিপণের অর্থ জোগাড় করছেন।

ওই মহিলা জানান, সন্ধ্যে ৭টা নাগাদ টাকা ও সোনা নিয়ে নৈহাটি স্টেশনে আসতে হবে। পুলিশকে পুরো বিষয়টা জানানো হয়। বহরমপুর থানার টাউন সাব-ইন্সপেক্টর অঞ্জন বর্মনের নেতৃত্বে চার জনের একটি দল বহরমপুর থেকে সালমা বিবিকে সঙ্গে নৈহাটি স্টেশনে রওনা দেন। পুলিশ নৈহাটি স্টেশনে পৌঁছনোর আগেই ওই মহিলা পুনরায় ফোনে জানায় রাত ১০টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনে আসতে হবে।

পুলিশ শিয়ালদহ স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পৌঁছয়। কিন্তু ওই মহিলার দেখা মেলেনি। এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘তখন সামলা বিবিকে দিয়ে ফোন করানো হয়। ওই মহিলা আসছি বলে জানায়। কিছুক্ষণ পরে ফোন করে হাওড়া স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলে ওই মহিলা। সেই মতো পুলিশ বাসস্ট্যান্ডে যায়। সামলা বিবিকে নামিয়ে দেওয়া হয়।’’ ওই মহিলা ফোন করে সালমা বিবিকে ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসতে বলে। সালমা বিবি একাই হেঁটে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছন। সালমা বিবির দিকে ওই মহিলা এগিয়ে আসেন।

সালমা জানান, প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে তাঁকে বসিয়ে টাকা ও সোনা চাওয়া হয়। পুলিশ ছেলেকে না দিলে মুক্তিপণ দিতে নিষেধ করেছিল। তিনি ওই মহিলাকে ছেলেকে তাঁর কোলে ফিরিয়ে দিতে বলেন। ওই মহিলা শিশুটিকে তাঁর কোলে এনে দেয়। টাকা ও সোনার জন্য মহিলা তাড়া দিতে থাকে। কিন্তু সাদা পোশাকে পুলিশ ওঁত পেতেই ছিল। পুলিশ ওই মহিলাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই মহিলা আগে দিল্লিতে ছিল। সেখানে তার বিয়েও হয়। কিন্তু বিয়ে টেঁকেনি। বহরমপুর থানার আইসি বলেন, ‘‘ওই মহিলা এর আগে কোনও শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child abduction Refuge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE