Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চার দেওয়ালের গণ্ডি ছেড়ে ক্লাস ঘুরছে মাঠঘাটে

সরু ইটের মোটা দেওয়ালে সিমেন্ট দিয়ে নিখুঁত নকশা। তার ফাঁকে কোথাও আগাছা, কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। ক্লাসের ফাঁকে যা দেখিয়ে শিক্ষকেরা মনে করাচ্ছেন, ১৯৪৯-এ স্কুলের এই জমিদার বাড়ির বারান্দাতেই এক মাত্র শিক্ষক নরেন সরকারের দায়িত্বে স্কুলের সূচনা ।

জমিদারবাড়ি: সামনে তখন বসেছে স্কুল। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

জমিদারবাড়ি: সামনে তখন বসেছে স্কুল। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

সরু ইটের মোটা দেওয়ালে সিমেন্ট দিয়ে নিখুঁত নকশা। তার ফাঁকে কোথাও আগাছা, কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। ক্লাসের ফাঁকে যা দেখিয়ে শিক্ষকেরা মনে করাচ্ছেন, ১৯৪৯-এ স্কুলের এই জমিদার বাড়ির বারান্দাতেই এক মাত্র শিক্ষক নরেন সরকারের দায়িত্বে স্কুলের সূচনা ।

সোমবার সেই বাড়ির সামনেই চট পেতে চলল দিনভর পঠনপাঠন। পিকনিকের আমেজে সেখানে বসেই খাওয়া হল মিড-ডে মিল। জলঙ্গির সাদখাঁড়দিয়াড় বিদ্যানিকেতনের এই অভিনব ক্লাস নিয়ে উচ্ছসিত ছাত্র থেকে অভিভাবকেরা। প্রাক্তন ছাত্রেরা দাঁড়িয়ে দেখেছেন ক্লাস। আর আক্ষেপ করেছেন, ‘‘আমাদের সময়ে যদি এমন ক্লাস করাতেন!’’

আসলে আর একটা শান্তিনিকেতন গড়তে চাইছেন ওঁরা। ‘‘একটু অন্য পরিবেশে ছাত্রদের নিয়ে ক্লাস করতে চাইছি আমরা, যাতে চার দেওয়ালের বন্দিত্ব থেকে তারা মুক্ত হয়। এলাকার ইতিহাস-ভুগোল বুঝতে পারে’’— বলছেন ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সামসুল হোদা।

স্কুল প্রতিষ্ঠতা-সম্পাদক, জমিদার বাড়ির সন্তান শিশির মুখোপাধ্যায়, প্রাণপুরুষ নিয়ামতুল্লা মণ্ডল ও প্রধান শিক্ষক সঙ্কর্ষণ গুপ্তের স্বপ্নই ছিল, শান্তিনিকেতনের ঢঙে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। পরে রাজ্য সড়ক লাগোয়া ৬৪ বিঘা জমিতে চলে যায় স্কুলটি। ফুলে-ফলে ভরে জমি। সাংস্কৃতিক মঞ্চ, খেলার মাঠ তৈরি হয়। দূরের ছাত্রেরা ছাত্রাবাসে থেকে পড়ত। থাকতেন শিক্ষকেরাও।

অনেকটা এগিয়েও একটা সময় থমকে গিয়েছিল স্বপ্ন। কেননা পেশায় চিকিৎসক শিশিরবাবু সাদিখাঁরদেয়াড় ছাড়েন। কিন্তু তাঁদের ছেড়ে যাওয়া রাশ হাতে নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। স্কুল থেকে বের করে পঞ্চম শ্রেণির ১৮০ জন ছাত্রছাত্রীকে এ দিন নিয়ে যাওয়া হয় জমিদারবাড়িতে। পড়াতে-পড়াতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন শিক্ষক শুক্লা বন্দোপাধ্যায়, সন্দীপ পাল, অমিত সাহা, মইনুদ্দিনেরাও। ছাত্রী তৌহিদা, হাসিনা, নয়নতারা খাতুনেরা বলে, ‘‘মাঝে-মাঝে এমন ক্লাস হলে খুব ভাল হয়।’’ শিক্ষকেরা জানান, অন্য শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে এর পরে পদ্মার চর, নদীর মোহনা, এলাকার বড় জঙ্গলেও ক্লাস হবে। সীমান্তের পদ্মার চরে ক্লাস নেবেন বিএসএফের কর্তারা। প্রাক্তন ছাত্রী সাফিউন্নেসা বলেন, ‘‘আমাদের সময়েও এমন ক্লাস হলে কী যে ভাল হত!’’ অভিভাবক আব্দুল কাদেরের আক্ষেপ, ‘‘ছেলেরা সবে স্কুল থেকে বেরিয়ে গেল! আগে যদি হত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Classroom School Ground
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE