Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চর জমিনে নোটের চাষ

নোট বাতিলের জেরে যে জাল নোটের কারবারে দাঁড়ি পড়েনি তা কিছু দিন আগে থেকেই মালুম হচ্ছিল। এ বার ইসলামপুরে দু’হাজার টাকার জাল নোট ধরা পড়ায় তা ফের সামনে চলে এসেছে।

বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

নোট বাতিলের জেরে যে জাল নোটের কারবারে দাঁড়ি পড়েনি তা কিছু দিন আগে থেকেই মালুম হচ্ছিল। এ বার ইসলামপুরে দু’হাজার টাকার জাল নোট ধরা পড়ায় তা ফের সামনে চলে এসেছে।

এবং ফের উঠেছে মালদহের সেই বৈষ্ণবনগরের নাম। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান লাগোয়া গঙ্গার অপর পারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রয়েছে বৈষ্ণবনগর থানার একাধিক চর গ্রাম। গোয়েন্দারা বলছেন, সেখান থেকেই ধুলিয়ানের ফেরিঘাট দিয়ে মুর্শিদাবাদে ঢুকছে জাল নোট। সেখান থেকে ট্রেনে চলে যাচ্ছে ফরাক্কা হয়ে বিহার, মুম্বই, কর্ণাটক, তামিলনাডু, দিল্লিতে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বহরমপুর হয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়ছে।

রাজ্যে জাল নোটের কারবারে শীর্ষে মালদহ । করিডোর হিসেবে এর পরেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ। এই দুই জেলায় জাল নোটের রমরমা ঠেকাতে একাধিক মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এনআইএ-কে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৭ কোটি টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে। দুই জেলার সীমান্ত এলাকায়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে জাল নোট এসে জমা হয় সেখানে। পরে তা মহব্বতপুর, চর অনন্তপুর, শোভাপুর, হাজিনগর-সহ আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পরে। সেখান থেকে জলপথে ধুলিয়ানে ।

রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের হিসেবে, আজ অবধি উদ্ধার হওয়া জাল নোটের ৯০ শতাংশ মিলেছে মালদহে বৈষ্ণবনগর ও কালিয়াচকের সীমান্ত এলাকায়। মুর্শিদাবাদে এই কারবারের শীর্ষে ধুলিয়ান তথা সমশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা। এনআইএ দেশ জুড়ে যে সব মামলায় চার্জশিট দিয়েছে, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যোগসূত্র বৈষ্ণবনগর থানার বিভিন্ন চর গ্রাম। বিএসএফের কর্তাদের মতে, ২০১৫ সাল থেকে বেশি বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে। ধুলিয়ান এলাকায় পদ্মাপাড়ে দৌলতপুর সীমান্তে এক জনের কাছ থেকেই সাতটি বস্তা বোঝাই জাল নোট পাওয়া গিয়েছিল।

জাল টাকা নিতে এসে ভিন রাজ্যের লোকের ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। কালিয়াচক পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল তামিলনাডুর ভেল্লোর জেলার অম্বার থানার আলাগাবুড়ি থেকে আসা রাজমণি লিঙ্গমবাবু নামে এক প্রৌঢ়। দেওনাপুরে আবার কর্ণাটকের হাসান থেকে আসা এ এস সতীশ নামে এক জনকে পাকড়াও করে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ। এক লক্ষ আসল টাকা দিয়ে সে সাড়ে তিন লক্ষের জাল নোট কিনতে এসেছিল। হরিয়ানার অম্বালা থেকে সুমেশ কুমার ও পঞ্জাবের ফতেগড় থেকে রাজেনকুমার এসেছিল কালিয়াচকে। বিহারের চম্পারণ থেকে কালিয়াচকে এসে জাল নোট নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বিহারের চম্পারণ থেকে আসা ১৭ বছরের পান্নালাল কুমার।

কালিয়াচকেই ধরা পড়ে হরিয়ানার সোনপথের মডেল টাউনের বাসিন্দা সালিম। বিহারের বেথিয়া জেলার সাথি থানার ভাবতার বাসিন্দা শরিফ মিঞা বহু দিন থেকেই জাল নোটের কারবারে জড়িত। মালদহের এক আত্মীয়ের সূত্রেই তার এই কারবারে হাতে খড়ি।

এগুলো সবই অবশ্য নোট বাতিল হওয়ার আগের ঘটনা। এখন যে তা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেই ইঙ্গিত পেয়েছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তার মতে, কালিয়াচক ছাড়াও চাঁচল, মানিকচক, গাজল এলাকায় কয়েকটি গ্যাং সক্রিয়, যারা বিভিন্ন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়া তরুণদের জাল নোটের কারবারে ব্যবহার করে। পার দেওনাপুর, মহব্বতপুর , চর অনন্তপুর, শোভাপুর, হাজিনগর-সহ যে ন’টি গ্রামকে আগেই ঘাঁটি বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেগুলিতে আবার পুরোদস্তুর কারবার শুরু হয়ে গিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Counterfeit Fake Notes Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE