Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার ঘুমোচ্ছেন, জন্মেই মৃত্যু শিশুর

সারা রাত প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করলেন তরুণী। হাসপাতালের লেবার রুমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন নার্সরা।

সুস্মিত হালদার
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:২৬
Share: Save:

সারা রাত প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করলেন তরুণী। হাসপাতালের লেবার রুমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন নার্সরা। চিকিৎসক কিন্তু এলেন না। তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটালেন হাসপাতালের পাশেই কোয়ার্টারে। শেষে ভোরের আলো ফুটতে তিনি যখন এলেন, মৃত্যু হয়েছে সদ্যোজাতের।

এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রোগিনীকে লেবার রুমে রক্তাক্ত অবস্থা ফেলে রেখেই পালিয়ে যান ওই চিকিৎসক। মঙ্গলবার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান মৃত শিশুটির পরিবার।

হাসপাতাল ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় শান্তিপুরের নিকুঞ্জনগর এলাকার বাসিন্দা পার্বতী বারুইকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মহিলার স্বামী আনন্দ বারুইয়ের অভিযোগ, “ওঁকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসি, তখন চিকিৎসক ছিলেন না। তিনি আসেন বেশ কিছুক্ষণ পরে। স্ত্রীকে দেখে বলেন, কোনও সমস্যা নেই। নর্মাল বাচ্চা হবে। বলেই তিনি চলে যান। রাতে আর দেখা মেলেনি।”

আনন্দ বলেন, “কিন্তু সময় যত বাড়তে থাকে, ততই আমার স্ত্রী-র প্রসব যন্ত্রনা বাড়তে থাকে। কিন্তু তাঁর সেই যন্ত্রনাকে গুরুত্ব দেয়নি কেউ।” রাতে হাসপাতালে পার্বতীদেবীর কাছে ছিলেন আনন্দর পিসি অঞ্জু মজুমদার। তিনি বলেন, “রাত যত বাড়ে, বৌমার যন্ত্রণা তত বাড়তে থাকে। নার্সরা শুনে বলে চিন্তার কোনও কারণ নেই, ঠিক সময়ে বাচ্চা হবে।”

তিনি জানান, প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে রাত তিনটে নাগাদ ওরা পার্বতীকে নিয়ে যায় লেবার রুমে। সেখানে শুইয়ে রাখা হয়। ‘‘আমি বাইরে দাঁড়িয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে ওদের দেখছিলাম। নার্সরা নানা ভাবে চেষ্টা করতে থাকে। ওরা আলোচনাও করছিল যে মাথাটা প্রায় বেরিয়ে এসেছে। আমিও যেন বাচ্চাটার চুল দেখতে পেলাম,” বলেন অঞ্জুদেবী। তার দাবি, এ ভাবে প্রায় তিন ঘন্টা কেটে যায়। প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন পার্বতী। সকাল হলে অভিযুক্ত মহিলা চিকিৎসক হন্তদন্ত হয়ে আসেন। এর পর বাচ্চাটিকে বের করা হয়। কিন্তু কিছু ক্ষণ পরেই তাঁরা এসে অঞ্জুদেবীকে জানান, শিশুটি মারা গিয়েছে। ‘‘ওরা আমাকে একটা সাদা কাগজে সই করতে বলে। কিন্তু আমি করিনি,” বলেন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রেও জানা গিয়েছে, রাতে ওই চিকিৎসক হাসপাতালে ছিলেন না। তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁর কোয়ার্টারে। নার্সদের দাবি, বিপদ বুঝে তাঁরা ওই চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি আসেননি। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

ঠিক কী সমস্যা হয়েছিল? নার্সদের বক্তব্য, কোন ভাবেই বাচ্চাটিকে প্রসব করানো যাচ্ছিল না। শিশুটির মাথাটা বের হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ফরসেপ ব্যবহার করে প্রসব করানো হয়। তত ক্ষণে শিশুটির অবস্থা খুবই খারাপ। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এর পরে মৃত্যু হয় শিশুটির।

অভিযোগ, বিষয়টি জানাজানি হলে সমস্যা হতে পারে বুঝতে পেরে পার্বতীকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখেই পালিয়ে যান চিকিৎসক সুরঙ্গমা শুকুল। অঞ্জুদেবীর থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসেন পরিবারের লোকজন। তাঁরা দেখেন, লেবার রুমের টেবিলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন পার্বতী। খবর পেয়ে ছুটে আসেন সুপার জয়ন্ত বিশ্বাস। ডাকা হয় অভিযুক্ত চিকিৎসক সুরঙ্গমা শুকুলকে। বেলা সাড়ে ন’টা নাগাদ
এসে তিনি প্রসূতির জননাঙ্গের ক্ষত সেলাই করেন।

কিন্তু কেন মৃত্যু হল শিশুটির?

প্রাথমিক ভাবে হাসপাতালের এক চিকিৎসকের অনুমান, ‘‘শিশুটির মাথা বেরিয়ে এসেছিল, কিন্তু শরীরটা আটকে ছিল দীর্ঘক্ষণ। সেটা একটা কারণ হতে পারে। পরে ফরসেপ দিয়ে বের করার চেষ্টা করা হয়। তাতেও কিছু হতে পারে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায় আবার, “পর্যাপ্ত অ্যানাসথেটিস্ট না থাকার জন্যই মঙ্গলবার রাতে সিজার করা সম্ভব হয়নি শান্তিপুর হাসপাতালে।’’ এ সব শুনতে রাজি নন শিশুটির বাবা আনন্দ বারুই। বলেন, “কার গাফিলতিতে মরতে হল আমার সন্তানকে? আমরা তাঁর শাস্তি চাই।”

অভিযুক্ত চিকিৎসক সুরঙ্গমা শুকুল বলেন, “আমার দিক থেকে কোনও গাফিলতি নেই। মনে হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”

গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুপার জয়ন্ত বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Sleeping new born death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE