Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রোগীর চাপ নেবেন কারা

এই ব্যবস্থা বাস্তবে কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। কেননা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর ভিড় মাত্রাধিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০১:১৮
Share: Save:

দ্রুত ই-প্রেসক্রিপশন চালু করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপের জন্য ২৮ জুলাই মুর্শিদাবাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতরে লিখিত নির্দেশ এসেছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ, পাঁচটি মহকুমা হাসপাতাল, তিনটে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, ২৬টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে এই ই-প্রেসক্রিপশন চালু হতে চলেছে।

কিন্তু এই ব্যবস্থা বাস্তবে কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। কেননা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর ভিড় মাত্রাধিক। আবার ৭০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধিকাংশেই কম্পিউটার নেই। এ ছাড়া এমন অনেক চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁরা কম্পিউটারে সড়গড় নন। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশ তাঁরা পালন করবেন কী করে, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস জানান, রোগের উপসর্গ বা রোগীকে কী ওষুধ দেওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য নথিবদ্ধ থাকলে চিকিৎসায় সুবিধে হবে। এটাই আগামী দিনের চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই ই-প্রেসক্রিপশনের জন্য প্রয়োজনে কম্পিউটার শিখতে হবে সকলকে। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেও কম্পিউটার ভাল চালাতে পারি না। কিন্তু কম্পিউটারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা ছাড়া উপায় নেই।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে মজুত ওষুধের নাম, মাত্রা, কত দিন খেতে হবে— এমন নানা তথ্য কম্পিউটারে তোলা থাকবে। কোনও রোগী বহির্বিভাগে দেখানোর জন্য এলে কাউন্টার থেকে দেওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর চিকিৎসক তাঁর কম্পিউটারে টাইপ করলে রোগীর বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। রোগী দেখে তিনি উপসর্গ ও ওষুধের তথ্য লিখে ই-প্রেসক্রিপশন করবেন ও তার প্রতিলিপি রোগীকে দেবেন। ওই রোগী প্রেসক্রিপশন হারিয়ে ফেললেও চিকিৎসকের কাছে নিজের নাম, টেলিফোন নম্বর বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলতে পারলেই তাঁর কী ধরনের চিকিৎসা হয়েছে, কম্পিউটার থেকে চিকিৎসক তা জানতে পেরে যাবেন।

তবে সমস্যা হল, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে বহির্বিভাগের প্রতিটি বিভাগে প্রতি দিন গড়ে চার হাজার রোগীর ভিড় হয়। তা সামাল দিয়ে ই-প্রেসক্রিপশন লিখতে চিকিৎসা মাথায় উঠবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকের একাংশ। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক কৃষ্ণ সেন বলেন, ‘‘বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এই বিভাগে রোগী দেখানোর ও ভর্তির যা চাপ তাতে ই-প্রেসক্রিপশন চালু করা হলে রোগী ও বাড়ির লোকের দুর্ভোগ বাড়বে বলে আমার ধারণা।’’ অস্থি-শল্য বিভাগে চিকিৎসক অমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘ই-প্রেসক্রিপশন খুব জরুরি। কিন্তু তাতে যে সময় ব্যয় হবে, রোগীর ভিড় সামাল দেবে কে!’’

এ দিকে ই-প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে ডাক্তারকে অভ্যস্ত করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, মহকুমা স্তরে অতিরিক্ত মু্খ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে ও প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ই-প্রেসক্রিপশন চালু করতে বিভিন্ন হাসপাতালে কতগুলি কম্পিউটার লাগবে, তা-ও জানতে চেয়ে প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলার ৭০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ৪২টিতে কম্পিউটার রয়েছে। কিন্তু ডাক্তার নেই, এমন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যাও কম নয়। ই-প্রেসক্রিশন কোনও রকমে চালু করা গেলেও তা নিয়ে বহু সমস্যা যে থেকেই যাবে, তা বলাই বাহুল্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

E-prescriptions Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE