লাচ্চা: ইদের আগে ব্যস্ত কারিগর। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
রমজান শুরু হতেই হারানো মুখগুলো বড্ড মনে পড়ে ইলিয়াস শেখের। সম্বৎসর হারিয়ে থাকা, আর পাঁচটা এলেবেলে দিন মজুরিরর গাধার খাটুনি অন্তে ইদের প্রাক্কালে ঠিক এসে ভিড় করা সেই সব ছা পোষা মুখ, কী গভীর এক মায়ার মতো মুর্শিদাবাদ আর নদিয়ার গাঁ-গঞ্জে তাদের প্রত্যাবর্তন!
আশি ছুঁই ছুই ইলিয়াস বলছেন, ‘‘একটু এ দিক ও দিক করলে তাদের কোনও বদল নেই। সেই হাসি মুখ, সেই সব ভুলে সেমুই তৈরির ব্যস্ততা, কোনও বদল নেই।’’ রোজ নিরম্বু উপবাসের পর পশ্চিম আকাশে নতুন চাঁদের অপেক্ষা, আর সব শেষ— কিসমিস, কাজু, আখরোট, চিনি, লবঙ্গ, দারুচিনির ফোটানো দুধের ঘন সেরায় ভেজানা, গোলাপজল ছেটানো লাচ্চা সেমুই। এ না হলে, খুশির ইদ বুঝি অধরা।
সেই স্বাদ ফেরাতেই সালারের কয়েকশো সেমুই শিল্পীর মাস দেড়েকের জন্য ক’টা বাড়তি টাকা রোজগারের উপায়। সেমুই ব্যবসার সঙ্গে সালারের মতোই জুড়ে রয়েছেন পড়শি নবদ্বীপের বামুনপুকুরের মিঠুন শেখ কিংবা গেদের রাহুল মণ্ডল। মিঠুন বলছেন, ‘‘অন্য সময় কলকাতায় একটা কাপড় ধোয়ার দোকানে কাজ করি। আর ইদের সময় মল্লিক বাজার এলাকা থেকে সেমুই কিনে গ্রামে এনে দু’ পয়সা বাড়তি আয় করি। দশটা দিন সেমুই তৈরি করে, আয়ের চেয়েও বেশি আনন্দ কুড়িয়ে ফিরে যাই কলকাতায়।’’ গেদের রাহুল মণ্ডলও বলছেন, ‘‘সারা বছরের ঠিকাদারি ব্যববসার ক্লেদ ওই সেমুই তৈরিতেই ধুয়ে যায় যেন।’’
সেমুই ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শুধু মুর্শিদাবাদ জেলাতেই ওই মাসখানেকে প্রায় বারো কোটি টাকার ব্যবসা হয়। প্যাকেট বন্দি হয়ে মুর্শিদাবাদের ওই সেমুই পাড়ি দেয়, বীরভূম, নদিয়ায় এমনকী ঝাড়খণ্ডেও। গুড় তৈরির মতো বিশাল কড়াইয়ে প্রায় রাতভর ফুটছে পাম তেল, ডালডা কিংবা ঘি।
হাতে ময়দার লেই তিন দফা রকমারি আকার আয়তন পেয়ে সব শেষে বিশাল উনুনের পাশে বসে থাকা প্রধান কারিগরের হাতের তালুর চাপে রুটির আকার নেয়। ফুটন্ত তেলে পড়ে নিমেষে তা ভাজা হয়ে লাচ্চা সেমুই।
মূলত রুল ময়দা দিয়ে সেমুই তৈরি করা হয়। তিন ধরণের সেমুই রয়েছে— লাচ্চা সেমুই, কাটি সেমুই ও জিরো সেমুই। সেমুই ব্যবসায়ী সুকুমার দে বলেন, “ঘিয়ে ভাজা হাতলাচ্চার মতো সুস্বাদু আর কোনও সেমুই নেই। কাঠি সেমুই ও জিরো সেমুই মূলত ভোনা রান্না হয়। ভোনা মানে শুকনো।’’ দিন বদলায় কিন্তু সেই সেমুই বদলায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy