যেন প্রায় আসল। —নিজস্ব চিত্র
দু’হাজার টাকার জাল নোট নিয়ে মালদহ থেকে মুর্শিদাবাদে এসে ধরা পড়ল এক যুবক। বুধবার ইসলামপুরে চাতরা ঘাট থেকে ৪০টি নোট-সহ তাকে ধরা হয়।
পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম আজিজুর রহমান। বাড়ি মালদহের বৈষ্ণবনগরে দেওনাপুর গ্রামে। এর আগেও বৈষ্ণবনগরে অন্তত দু’বার দু’একটি করে জাল দু’হাজার টাকার নোট পাওয়া গিয়েছে। ওই এলাকায় আগেও জাল নোটের রমরমা ছিল।
গত ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের জেরে জাল টাকার দফারফা হবে বলে দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ তার পরে-পরেই পঞ্জাব ও ওড়িশায় নতুন টাকার জাল ধরা পড়ে। ওই সময়েই কাঁথিতে দু’হাজারি নোটের ‘কালার ফটোকপি’ করে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। এ বার তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে ‘অফসেট প্রিন্ট’ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ইসলামপুরে জাল টাকার কারবার করতে এসেছিল ওই যুবক। গোপনে খবর পেয়ে তাকে ধরা হয়।’’ কী করে বোঝা গেল যে টাকাটা জাল? পুলিশ সূত্রের খবর, যে কাগজে জাল নোট ছাপা হয়েছে তা আসলের চেয়ে সামান্য মোটা, তবে অনেকের পক্ষেই তা ধরা সহজ নয়। ছাপা হুবহু না হলেও প্রায় আসলেরই মতো। তা হলে ধরা পড়ল কী করে? প্রথমত, পুলিশের কাছে আগাম খবর ছিল। সেই মতো ইসলামপুরের চাতরা ঘাটে ওত পাতা হয়। আজিজুর সম্ভবত মালদহ থেকে ফরাক্কা ও জঙ্গিপুর হয়ে লালগোলায় পৌঁছেছিল। তার পরে ভৈরব পেরিয়ে ইসলামপুরে ঢুকতেই তাকে পাকড়াও করা হয়।
দ্বিতীয়ত, আজিজুরের কাছে থাকা জাল নোট দেখতে প্রায় আসলের মতো হলেও তাতে নতুন রঙের গন্ধ ছিল। ‘অফসেট’ যন্ত্রে ছাপা হলে কিছু দিন কাগজে রঙের গন্ধ থাকে (যেমন থাকে নতুন বইয়ে), যা টাঁকশালে বিশেষ পদ্ধতিতে ছাপানো নোটে থাকে না। এই গন্ধবিচারেই আজিজুর ধরা পড়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, নতুন জাল টাকা মুর্শিদাবাদের নোট কারবারিদের কাছে পৌঁছে দিতে এসেছিল সে। আজ, বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা।
কিন্তু পুলিশকে ভাবাচ্ছে মূলত চারটি বিষয়— ১) ইসলামপুর পর্যন্ত আসার পথে আজিজুর কত জায়গায় জাল নোট ছড়িয়ে এসেছে? ২) এখন যে নোটে রঙের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তা কিছু দিন বাদেই উবে যাবে, যেমন হয় বই পুরনো হলে। তখন জাল নোট চেনা আরও শক্ত হয়ে দাঁড়াবে। ৩) জাল নোট যদি বৈষ্ণবনগর থেকে এত দূরে চলে আসতে পারে, তবে তা হয়তো আরও নানা দিকে ছড়িয়েছে। ৪) দেশের মানুষকে নাকাল করে নোট বাতিলের তিন মাসের মধ্যে যদি নতুন নোটের প্রায় নিখুঁত জাল বেরিয়ে যায়, তবে আর ক’মাস বাদে কী হাল হবে?
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জেলা মালদহ-মুর্শিদাবাদ ছাড়াও রাজ্যের অন্যত্র জাল নোট কতটা ছড়িয়েছে, সেটাই আপাতত খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy