Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধের মুখ থেকে ফিরে চমক ফরাক্কা হাইস্কুলের

শুধু তাই নয়, এই স্কুলেরই ছাত্রী সোমদত্তা রায় ৬৭৯ পেয়েছে। রাজ্যের সেরা দশের তালিকা থেকে মাত্র দু’নম্বর পিছিয়ে। স্কুল থেকে এ বারে স্টার পেয়েছে ১২ জন, প্রথম বিভাগে রয়েছে ২১ জনের নাম।

সাফল্য: ফরাক্কা ব্যারাজ হাইস্কুল।—নিজস্ব চিত্র

সাফল্য: ফরাক্কা ব্যারাজ হাইস্কুল।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০২:১৭
Share: Save:

শিক্ষকের অভাবে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল স্কুল। অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় হাল ফিরেছে স্কুলের। এ বার মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করে ফের চমক ফরাক্কা ব্যারাজ হাইস্কুলের। পর পর এ নিয়ে চার বার একশো শতাংশের পাশের নজির গড়ল। এ বছর ৭৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৬ জনই উত্তীর্ণ হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই স্কুলেরই ছাত্রী সোমদত্তা রায় ৬৭৯ পেয়েছে। রাজ্যের সেরা দশের তালিকা থেকে মাত্র দু’নম্বর পিছিয়ে। স্কুল থেকে এ বারে স্টার পেয়েছে ১২ জন, প্রথম বিভাগে রয়েছে ২১ জনের নাম।

গত বছরও ৯৭ জনের মধ্যে ৯৭ জনই উত্তীর্ণ হয়েছিল, যার মধ্যে স্টার ছিল ২৫ জন, প্রথম বিভাগ ৭০ জনের। ২০১৫ তে ৯৩ এবং ২০১৪ সালে ৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ছিল ১০০ শতাংশই।

অথচ শিক্ষক সঙ্কটে এই স্কুলটি ধুঁকছে প্রায় এক দশক ধরে। শিক্ষক সংখ্যা ৫২ জনের জায়গায় ১১তে নেমে গিয়ে চরম অচলাবস্থায় পড়ে একসময় স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। সেই স্কুলেরই এ বার তাক লাগানো রেজাল্ট করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে জেলায়।

১৯৬৫ সালে ফরাক্কা ব্যারাজ তৈরির শুরু থেকেই রাজ্য সরকারের শিক্ষা সংসদের অধীনে এই বিদ্যালয় চালু হয়। উন্নীত হয় দ্বাদশ শ্রেণিতে। স্কুল ভবন, শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগ-সহ যাবতীয় পরিকাঠামো কেন্দ্রীয় সরকারের জল সম্পদ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে।

গত কয়েক বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষকের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১১ জনে। বিজ্ঞান শাখা শিক্ষকের অভাবে বন্ধ। ছাত্র ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রাথমিক ও একাদশ শ্রেণিতে। স্কুল বাঁচাতে পথে নেমেছে গোটা ফরাক্কা। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠির পর চিঠি। তারই ফলশ্রুতিতে এ বছর মিলেছে ১৬ জন শিক্ষক।

স্কুলটি তৈরি হয়েছিল ব্যারাজের কর্মী পরিবারের ছেলে মেয়েদের জন্য। ব্যারাজের কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রায় ৯৫ শতাংশ ছাত্র ছাত্রীই এখন আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে আসে। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ১০০ শতাংশ ছাত্র ছাত্রী কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করে আসছে কী ভাবে ?

স্কুলের অধ্যক্ষ মনোজ পানির কথায়, “শিক্ষক সংখ্যা কমলেও বাড়তি ক্লাস নিয়ে সিলেবাস শেষ করার চেষ্টা হয়েছে। ক্লাস হয়েছে গরমের ছুটিতেও।’’

অঙ্ক ও জীবন বিজ্ঞানে ১০০ পাওয়া কৃতী ছাত্রী সোমদত্তা অবশ্য বলছে, “সাফল্যের মূলে স্কুলের শিক্ষকদের অক্লান্ত সাহায্য তো বটেই। তবে আফশোস একটাই আর দু’টো নম্বর যদি বেশি পেতাম তা হলে রাজ্যে সেরা দশের তালিকায় থাকতাম আমিও।”

রানাঘাটের বাসিন্দা চাকরি সূত্রে ফরাক্কাবাসী বাবা বিকাশ রায় বলছেন, “মেয়ের মেধা নিয়ে কোনও আফশোস নেই আমার। দু’এক নম্বরে কি এসে যায়। মেয়ের মাধ্যমিকের ফলে আমি খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE