Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাবা-মেয়ের ঝুলন্ত দেহ, ‘আত্মহত্যা’ বলছে পুলিশ

বাবা-মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। বুধবার বহরমপুরের বানজেটিয়া গ্রিনফার্ম এলাকার ঘটনা। মৃতেরা হলেন গণেশ সরকার (৪৩) ও সুইটি সরকার (১৮)।

শোকে ভেঙে পড়েছেন টুসিদেবী।— নিজস্ব চিত্র

শোকে ভেঙে পড়েছেন টুসিদেবী।— নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০১:৫৪
Share: Save:

বাবা-মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। বুধবার বহরমপুরের বানজেটিয়া গ্রিনফার্ম এলাকার ঘটনা। মৃতেরা হলেন গণেশ সরকার (৪৩) ও সুইটি সরকার (১৮)। সুইটি জন্ম থেকেই অন্ধ, মূক ও বধির ছিলেন। বহরমপুর থানার আইসি শৈলেনকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘পারিবারিক বিবাদের জেরে বাবা-মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গণেশবাবু পাটের ব্যবসা করতেন। সেই সঙ্গে জমি কেনাবেচারও করতেন। দু’টো অটো বহরমপুর-নিমতলা রুটে ভাড়াও খাটত। তখনই তিনি গ্রিনফার্মের কাছে বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কের পাশে প্রায় তিন কাঠা জায়গার উপরে একতলা পাকা বাড়ি বানান। রাস্তামুখী দু’টি ঘর ও গুদাম ভাড়া দেন। প্রতিবেশীদের জানান, পাট ব্যবসায় প্রচুর লোকসানের মুখে পড়েন গণেশবাবু। বাধ্য হয়ে দু’টো অটো বেচে দেন। জমি বেচাকেনাও সে ভাবে না হওয়ায় আর্থিক ভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। ভাড়ায় টাকায় কোনও রকমে সংসার চলে। তার মধ্যে ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জেনিভার পড়াশোনারও খরচ রয়েছে। টুসিদেবী জানান, গণেশবাবু কোনও কাজ করতেন না। সারা দিন বড় মেয়েকে নিয়েই বাড়িতে থাকতেন। এর মধ্যে সোমবার ছোটমেয়েকে নিয়ে জলঙ্গিতে দিদির বাড়িতে ধনিরামপুরে যান। বুধবার সন্ধ্যায় বাস থেকে নামতে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। গণেশবাবু স্ত্রীকে বাড়িতে ঢুকতে মানা করেন। পাড়া প্রতিবেশীদের চেষ্টায় ঝগড়া থামে। কিন্তু ওই রাতেই ওই বিপত্তি।

টুসিদেবী জানান, ঝগড়া শেষে মেয়েকে নিয়ে গণেশবাবু ভেতর থেকে দরজা আটকে শুয়ে পড়েন। বার বার করে ধাক্কা দিলেও দরজা খোলেনি। তখন তিনি জানালার ফাঁক দিয়ে দেখেন বিছানার উপরে চেয়ার তোলা। তখনই তাঁর সন্দেহ হয়। চিৎকার করে তিনি লোকজন ডাকেন। বাড়ির পাশেই টুসিদেবীর এক পিসি থাকেন। তাঁকেও ফোন করে বিষয়টি জানান। প্রতিবেশীরা এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দরজা খুলতে পারেনি। তখন টুসিদেবী ধাক্কা দিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলেন। তখনই মেয়ে ও বাবাকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। সেই দৃশ্য দেখে টুসিদেবী জ্ঞান হারান। পাড়া-প্রতিবেশীরা বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা মেরে দরজা খুলে ফেলেন। টুসিদেবী বলেন, ‘‘সকলকে বলি দড়ি কেটে ওদের নামানোর জন্য। কিন্তু কেউ এগোয়নি। তা হলে হয়তো ওদের বাঁচানো যেত।’’ নিজে দড়ি কেটে তাঁদের বাঁচানোর কথাও তাঁর মাথায় আসেনি।

দড়ির ফাঁস কেটে নামানোর কথা বললেও পুলিশের ভয়ে কেউ যায়নি বলেও পড়শিরা স্বীকার করছেন। পেশায় চাল ব্যবসায়ী পড়শি অজয় সরকার বলেন, ‘‘দরজা খুলে যখন আমরা ভেতরে ঢুকি তখনই জিভ কেটে বসে গিয়েছে। দু’জনের শরীর অসাড়। ওই অবস্থায় ফাঁস নামানো হলে বাঁচানো যেত কি না সন্দেহ ছিল। তবে পুলিশের ভয়ে কেউই সাহস করে এগোয়নি এটা সত্যি।’’ আরও এক বাসিন্দা অরিন্দম মণ্ডল বলেন, ‘‘সকালে বিষয়টি জেনেছি। শুনেছি দড়ির ফাঁস কেটে নামানো হলে হয়তো বাবা-মেয়ে প্রাণে বেঁচে যেত।’’ পরে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে দড়ির ফাঁস কেটে বাবা ও মেয়েকে নামিয়ে নিয়ে যায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসক ওই দুজনকেই মৃত বলে জানান।

বিএসসি পাশ গণেশবাবু এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে আর্থিক কারণে বর্তমানে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলেও পড়শিরা জানান। অবসাদ থেকেই প্রতিবন্ধী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আত্মঘাতীর হওয়ার পথ বেছে নেন বলে পড়শিদের অনুমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE