Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের দেহ কাঁধে ছুটলেন বাবা

বাসের জানলার পাশের আসনে লুটিয়ে পড়েছে ছেলের দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। ছেলেকে আঁকড়ে উন্মাদের মতো চিৎকার করছেন বছর পঁয়তাল্লিশের এক যুবক, ‘‘ওর হাতটা চলে গেল গো। তোমরা কেউ বাসটাকে থামাও।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি জখম এক যাত্রী।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ভর্তি জখম এক যাত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
Share: Save:

বাসের জানলার পাশের আসনে লুটিয়ে পড়েছে ছেলের দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। ছেলেকে আঁকড়ে উন্মাদের মতো চিৎকার করছেন বছর পঁয়তাল্লিশের এক যুবক, ‘‘ওর হাতটা চলে গেল গো। তোমরা কেউ বাসটাকে থামাও।’’

আরও একজনের হাত ছিঁড়ে গিয়েছে। তাঁরও নিথর দেহ পড়ে রয়েছে বাসের মধ্যে। জখম হয়েছেন তিন জন। গোটা বাস জুড়ে তুমুল চিৎকার, কান্না, হাহাকার। বাসটা কিন্তু থামছে না। শেষ পর্যন্ত যাত্রীদের চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন এসে বাসটিকে থামায়। বাস থামতেই ছেলের দেহ কাঁধে হাসপাতালের দিকে ছুটলেন সসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকেরা অবশ্য জানান, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগেই মারা গিয়েছে শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৩)।

রবিবার দুপুরে কান্দিতে একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে ধাক্কা মারে সাঁইথিয়াগামী একটি বাস। চালক বাস নিয়ে তড়িঘড়ি পালাতে গিয়েই ওই ট্রাকের সঙ্গে ফের ধাক্কা লেগে শুভঙ্করের মতোই মমতা রাজেরও (৪৩) ডান হাত ছিঁড়ে যায়। বাসটি একটি পথচারীকেও ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলে মারা যান অজ্ঞাতপরিচয় সেই যুবকও।

বাসে তখনও লেগে রক্ত।

শুভঙ্কর ও মমতাদেবী দু’জনেই বড়ঞার আন্দি গ্রামের বাসিন্দা। কান্দি থেকে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। শুভঙ্কর বড়ঞার একটি বেসরকারি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছেলেকে নিয়ে বহরমপুরে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলেন সসীমবাবু।

বাসে উঠলেই শুভঙ্কর জানলার পাশের আসন ছাড়া বসত না। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সসীমবাবু বলছেন, ‘‘আমি জোর করে ওর সিটটাই বসলে ছেলেটা বেঁচে যেত জানেন!’’ মমতাদেবীও বহরমপুর হাসপাতালে এক আত্মীয়কে দেখে দেওর ও ভাইপোর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। মমতাদেবীর ভাইপো তাপসবাবু বলছেন, ‘‘জানলার পাশে আমার বাবাও বসেছিলেন। বাসটি ঝাঁকুনি দিয়ে এগোতেই অনেকে টাল সামলাতে না পেরে হাত চলে গিয়েছিল জানলার বাইরে। ভাগ্যিস বাবাকে সেই সময় জাপটে ধরেছিলাম।

ছেলেকে হারিয়ে কান্না বাবার। নিজস্ব চিত্র

জেঠিমা আমাদের পিছনের সিটে ছিলেন। তিনি সেটা সামলাতে পারেননি।’’ এ দিন মৃত্যুসংবাদ গ্রামে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে দুই পরিবারের সদস্য ও পড়শিরা। শুভঙ্করের মা বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই জানতে চাইছেন, ‘‘শুভ কি বাড়ি এল?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE