জলের-দর: ফরাক্কায় সস্তা ইলিশ।—নিজস্ব চিত্র।
এ যেন ভাইফোঁটার ভেট। ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ উঠছে ফরাক্কার গঙ্গায়। ছোট ইলিশ থেকে শুরু করে সাতশো-আটশো গ্রাম এক-একটা। মৎস্যজীবী, পাইকার, খদ্দের মিলে রোজ সকাল থেকে গঙ্গাপাড়ে মেলা।
এমনিতে ফরাক্কায় ইলিশের দেখা বিশেষ মেলে না। মৎস্য দফতরের ব্যাখ্যা, নিমতিতার আগে গঙ্গা থেকে বেরিয়েছে পদ্মা। সেই বাঁকা পথেই বাংলাদেশের ইলিশের ঝাঁক ঢুকেছে ফরাক্কায়। গত পাঁচ দিন ধরে ফরাক্কা ব্যারাজের উজানে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বান ডেকেছে ইলিশের।
অঢেল ইলিশ ওঠার খবর পেয়ে সকাল থেকে মহাজনদের ভিড় জমছে গঙ্গাপাড়ে। মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে তাঁরা সরাসরি ইলিশ কিনে নিচ্ছেন জলের দরে। সকাল-বিকেল ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার মানুষও।
ইলিশের দেখা মিলতেই শতাধিক মৎস্যজীবী ধুলিয়ান, হাজারপুর, অর্জুনপুর, মহেশপুর লাগোয়া গঙ্গায় নেমে পড়েছেন। টিনের ডোঙা থেকে ফাঁস জাল ফেলতে ফেলতে যাচ্ছেন তাঁরা নদী বেয়ে। কয়েক ঘণ্টা পরে জাল গোটাতে-গোটাতে ফিরছেন। ফাঁস জালে ইলিশ ধরা বেআইনি। কিন্তু জেলেদের বক্তব্য, এ তো সবই বাংলাদেশের ইলিশ। এ দেশের মাছ তো আর ধরা হচ্ছে না!
নিউ ফরাক্কার ব্লক অফিসের পাশেই পাইকারি মাছের বাজার। সেখানেও ইলিশের ঢল নেমেছে। মাছ ব্যবসায়ী মঞ্জুর শেখ বলেন, “সাধারণ সময়ে ফরাক্কার বাজারে ইলিশের জোগান আসে বড় জোর ৫/৬ মণ মতো। গত পাঁচ দিন ধরে ১৫০ থেকে ১৮০ মণ করে আসছে। এক দিন তো ২০০ মণও ছাড়িয়ে গিয়েছে।” এই সব ইলিশের অর্ধেকের বেশি ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে। দাম সাইজ অনুযায়ী ২৫০ টাকার মধ্যে। বাকি ৪০০ গ্রামের নীচে, সে সব বিকোচ্ছে বড় জোর ৮০ টাকা কিলো দরে।
গত বছর পুজোতেও দিন দশেকের জন্য গঙ্গায় ইলিশ মিলেছিল দৈনিক তিনশো মণের বেশি। জেলার মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা জয়ন্তকুমার প্রধান জানান, এই সময়ে সমুদ্র থেকে ইলিশের ঝাঁক পদ্মায় মিঠে জলে ডিম ছাড়তে আসে। তাদেরই কিছু কোনও ভাবে ফরাক্কার গঙ্গায় চলে এসেছে। এটা সাময়িক ব্যাপার।
হাজারপুরে নদীর পাড়ে এখন প্রায় মেলা বসছে সকাল-সন্ধে। মৎস্যজীবী বুধন হালদার বলেন , “গত পাঁচ দিনে ১৩৮ কিলো ইলিশ ধরা পড়েছে শুধু আমার জালেই। বেশির ভাগই ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রামের মধ্যে। তবে এত বেশি ইলিশ ওঠায় দর নেই তেমন।”
মৎস্য দফতরের কর্তার হিসেবে, প্রাপ্তবয়স্ক একটি ইলিশ ২০ লক্ষ মতো ডিম পাড়ে। তার ১০ শতাংশ বাঁচলেও এক বছরেই তার সংখ্যা দাঁড়াবে লক্ষাধিক। সেই কারণেই ডিম ছাড়ার সময়ে বাংলাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা আছে এ বঙ্গেও । ফরাক্কায় অবশ্য এ সব মানার বালাই নেই এখন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy