ক্যালেন্ডারের পাতা বদলায়। মাস গড়িয়ে বছর ঘোরে। কিন্তু মামলার তারিখ পড়ে না। কারণ, মামলার নথিই যে বেপাত্তা।
স্বামী খুনের বিচার শুরুর অপেক্ষায় দীর্ঘদিন বসেছিলেন সুতীর ফুলটুসি রায়। হাইকোর্ট থেকে আসা নথির নাকি খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের এক বিচারপতির হস্তক্ষেপে ২৪ ঘণ্টাতেই মিলে যায় সেই নথি। ফুলটুসির নথি মিললেও জঙ্গিপুর আদালতে এমন অনেক মামলার নথির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন সরকারী আইনজীবীরাও।
সুতির ফতুল্লাপুরের দ্বিজেন্দ্রনাথ দাস মামলা করেছিলেন, তাঁর মেয়ে টমি দাসকে শ্বশুরবাড়িতে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। জঙ্গিপুরের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে টমির স্বামীকে ও শ্বশুরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও কলকাতা হাইকোর্ট তাঁদের থেকে শর্তাধীন জামিন দেয়। ওই মামলায় ফেরার আরও দুই অভিযুক্ত জঙ্গিপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। তার পর দেড় বছর পার হয়ে গেলেও শুরু করা যায়নি বিচার। কারণ, মামলার নথিই উধাও।
স্বামী অজিত দাসের ‘খুনের’ বিচারের আশায় দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন জাফরাবাদের তৃপ্তি দাস। ২০১৪ সালে জঙ্গিপুরের প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে এক অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনিও। অন্য অভিযুক্তেরাও আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়ে যান। সেই মামলার নথিও হাইকোরেট থেকে ফেরত এসেছে। কিন্তু, তা আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুরু হচ্ছে না শুনানিও।
জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী অশোক সাহা বলছেন, “নথি না পাওয়া গেলে বিচার কী করে হবে? নথি যে কীভাবে বেপাত্তা হল, তাই বুঝতে পারছি না।’’
অনুপ্রবেশের দায়ে ধৃত মিলন সেখ নামে এক বাংলাদেশিকে যুবককে জামিন দেয় জঙ্গিপুরআদালত। একজন বাংলাদেশি কীভাবে জামিন পেল, জানতে চেয়ে জঙ্গিপুর আদালতের আইনজীবী পঞ্চানন পান্ডে নথির ‘কপি’ চেয়ে আবেদন করেন।
পঞ্চাননবাবু জানান, কপি বিভাগে তিনি ওই মামলার কোনও নথিই খুঁজে পাননি।
মুর্শিদাবাদের জেলা আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘নথি পাওয়া যাচ্ছে না, এমন অজুহাতে মানুষ বিচার পাবে না তা হতে পারে না। আমি ওই আদালতের সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব।’’
প্রশ্ন উঠছে, নথি নিখোঁজ কী স্বাভাবিক ঘটনা, নাকি এর পিছনে রয়েছে কারওর কারসাজি? সে বিচারও তো থমকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy