Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
রয়ে গেল কিছু হারানো গল্পও

সাঁঝের সাজে প্রাণ পেল রথ

মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, জিয়াগঞ্জ, কান্দি, লালগোলা, নসিপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক প্রাচীন রথ পথে নামে। তার মধ্যে লালগোলার রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী প্রবর্তিত রথ। পদ্মাপাড়ের লালগোলা রাজবাড়ির এই রথকে ঘিরে বসে বিশাল মেলা।

জয়-জগন্নাথ: স্নানযাত্রার পর শনিবার খুলল মন্দিরের দ্বার। রাজাপুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

জয়-জগন্নাথ: স্নানযাত্রার পর শনিবার খুলল মন্দিরের দ্বার। রাজাপুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০২:১০
Share: Save:

রথের মেলায় পথ হারিয়ে ছিল বঙ্কিমের রাধারানী। রথের বিকেলে পথ হারানোর সেই শুরু। এখন রথের ভিড়ে পথ হারায় বুঝি সকলেই।

নবদ্বীপের মণিপুর রাজবাড়ি থেকে লালগোলার রাজবাড়ি, মায়াপুর ইস্কন থেকে কান্দির রাজবাড়ি না হয় বহরমপুরের জগন্নাথ ঘাট থেকে নসিপুরে রথের চাকা আষাঢ়-সন্ধ্যায় গড়াতে শুরু করলেই মানুষ ঠাওর করতে পারে না— কোন রথের পথ ধরে হাঁটব!

বৈভবে আড়ম্বরে এদের এক একটি বুঝু অন্যকে ছাপিয়ে যায়। রথযাত্রার উৎসবে হবিবপুর ইস্কনের খ্যাতি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ বার তাদের একুশতম বর্ষে ভক্তদের জন্য অভিনব ‘তুলাভরণের’ আয়োজন করেছে তাঁরা। হবিবপুর ইস্কনের জেনারেল ম্যানেজার শ্রীপতি কেশব দাস জানান, সকলেই ‘তুলাভরণে’ যোগ দিতে পারবেন। জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়িতে একটি ওজনের মেশিন বা তুলাযন্ত্র রাখা থাকবে। রাধামাধব মন্দির থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অস্থায়ী গুন্ডিচায় জগন্নাথ পৌঁছানোর পর ভক্তরা চাইলে সন্তানের সমান ওজনে চাল, তেল, ঘি, আলু, সরষের তেল প্রভৃতি তাঁর সেবার জন্য দিতে পারবেন, দান চলবে উল্টোরথ পর্যন্ত।

মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, জিয়াগঞ্জ, কান্দি, লালগোলা, নসিপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক প্রাচীন রথ পথে নামে। তার মধ্যে লালগোলার রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী প্রবর্তিত রথ। পদ্মাপাড়ের লালগোলা রাজবাড়ির এই রথকে ঘিরে বসে বিশাল মেলা। সোজা রথ থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত রাজবাড়ি চত্বরে সে মেলায় সার্কাস থেকে বেলন-চাকির বিপুল আয়োজন। দানবীর রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণের আমলে মেলায় আসা মানুষের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হত রাজবাড়ি থেকেই। তখন অবিভক্ত বাংলা। পদ্মার অন্যপাড়ে রাজশাহী, চাঁপাই নবাবপুরের মানুষ বছরভর মুখিয়ে থাকতেন লালগোলার রথের মেলার জন্য। এক সময়ে ভাগ হল দেশ। একই নদীর দু’পার বদলে গেল দুই ভিন রাষ্ট্রে। এখনও লালগোলার রথের মেলার পাঁপড়ভাজা সেই আগের মতোই মুচমুচে। কিন্তু পদ্মাপাড়ের মানুষেরা তার স্বাদ পাচ্ছেন না।

চৈতন্যধাম নবদ্বীপে অন্যতম প্রাচীন রথটি পথে নেমে ছিল এক ভিনরাজ্যের রাজকুমারীর হাত ধরে। তিনি মণিপুররাজ ভাগ্যচন্দ্র সিংহের কন্যা বিম্ববতী মঞ্জরী দেবী। নবদ্বীপের মনিপুর রাজবাড়ির রথের চাকা গড়াচ্ছে তিনটি শতক ধরে। ভাগ্যচন্দ্র সিংহ নবদ্বীপে আসেন ১৭৯৭ সালে। মনিপুর রাজবাড়ির রথের সুচনা ১৮০৫ সালে। উল্টোরথ পর্যন্ত প্রতিসন্ধ্যায় মণিপুরী নাচের সঙ্গে জয়দেবের পদ গেয়ে জগন্নাথের সন্ধ্যারতি এই রথযাত্রায় স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছে।

তবে থেমে যাওয়া রথের সংখ্যাও নেহাত কম নয় প্রাচীন এই জনপদে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য অদ্বৈতবংশের জগন্নাথ দেবের রথ। প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন নবদ্বীপের জগন্নাথ বাড়ির রথযাত্রা বন্ধ হয়েছে কবেই। একই ছবি বাসুদেবের রথের। বাংলার শেষ স্বাধীন রাজা লক্ষ্মণ সেনের প্রধানমন্ত্রী হলায়ুধের অধস্তন পঞ্চমপুরুষ জগন্নাথ গোস্বামীর হাত ধরে ওপার বাংলায় চলতে শুরু করেছিল বাসুদেবের রথের। কিন্তু দেশভাগের পর এপারে এসে লোকাভাব আর অর্থাভাবের কাছে হেরে গিয়েছেন বাসুদেব।

এমনই স্মৃতি আর সংযোজন নিয়ে সেজে উঠেছে আষাঢ়ের সাঁঝবেলা।

(তথ্য সহায়তা: অনল আবেদিন ও সৌমিত্র সিকদার )

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ratha Yatra 2017 Crowd রথ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE