সাজের-কাজ: গড়ে উঠছে প্রতিমার অলঙ্কার। নিজস্ব চিত্র
ঘরের ভিতরে টিমটিম করছে ডুমো বাল্ব। মাথার উপরে ক্লান্ত গতিতে পাক খাচ্ছে পাখা। পলেস্তারা খসা দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন বছর পঞ্চাশের জয়ন্তী দত্ত। চোখে মুখে রাতজাগার ছাপ। অথচ তাঁর হাত অভ্যস্ত ভঙ্গিতে তৈরি করে চলেছে ডাকের সাজের অন্যতম উপকরণ ‘খোঁজ।’ ম্লান হাসছেন জয়ন্তী, ‘‘চোখ দু’টো মাঝেমধ্যেই লেগে আসছে। টানা রাত জাগতে হচ্ছে। অথচ উপায় কী, বলুন? যেমন করেই হোক, পুজোর কাজটা তো তুলে দিতে হবে।”
এ ভাবেই কৃষ্ণনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভূতপাড়া, গোয়ালদহ, গোবরাপোতা, চিত্রশালী, দোগাছি, শক্তিনগর এলাকায় রাত জাগেন মহিলারা। ডাকের সাজের সূক্ষ্ম সব কাজে ভরসা তাঁরাই। মুগ্ধ করা ঝলমলে ডাকের সাজের আড়ালে ওঁদের পরিশ্রমের কথা জানতে পারে না কেউ। কৃষ্ণনগরের ডাকের সাজ পৃথিবী বিখ্যাত। সে সাজ আলোয় ঝলমল করে। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন, ডাকের সাজ মানুষকে আকর্ষণ করে, ডাকে। সেই কারণে একে ডাকের সাজ বলা হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এক সময় ডাকে এই সাজ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হতো বলেই এর নাম ডাকের সাজ। কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত ডাকের সাজের শিল্পী আশীষকুমার বাগচী বলছেন, “তখন এই সাজের উপকরণ এখানে পাওয়া যেত না। ডাক যোগে নিয়ে আসা হতো জার্মানি থেকে। জাহাজে করে। সেই কারণে এই সাজের নাম ডাকের সাজ।”
কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের হাতে তৈরি ডাকের সাজের চাহিদা বেড়েছে বহু গুণ। সেই কারণে এখন প্রায় সারা বছরই ডাকের সাজ তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন শিল্পীরা। কিন্তু দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত কাজের চাপ থাকে মারাত্মক। সেই কারণে মহিলারাও এখন যোগ দিয়েছেন সেই কাজে। শিল্পীদের কাছ থেকে কাঁচা মাল নিয়ে যান বাড়িতে। সংসার সামলেও সময় বের করে সেই কাজ করেন। কাজের হিসাব মিলিয়ে মেলে মজুরি।
আশিসবাবু বলছেন, ‘‘মহিলাদের দিয়ে আমরা সাজের উপকরণ তৈরি করাই। কারণ, ওঁদের কাজ অনেক সূক্ষ্ম হয়।’’ জয়ন্তী দত্ত, সঞ্চিতা দাসেরা হলুদ মাখা আঁচলে আঠা মুছতে মুছতে বলছেন, ‘‘পুজোর আগে এই কাজটা করি বলেই না সংসারের চাকা গতি পায়। পুজোর ক’টা দিন অন্ধকার ঘোচে। এটাই বা কম কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy