Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
হতাশা কাটাতে শিবির

স্কুল-প্রধানের জন্য প্রশিক্ষক

প্রতিটি স্কুলে যিনি প্রধান কাণ্ডারী, সেই প্রধান শিক্ষকই বহু ক্ষেত্রে আক্রান্ত হচ্ছেন হতাশায়। তাঁদের সেই অবসাদ থেকে বের করে আনতে এবং উজ্জীবিত করতে ক্রীড়াজগৎ থেকে ‘মেন্টাল ট্রেনার’ এনে দু’দিন ধরে শিবির করা হল নদিয়ায়। আয়োজনে নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।

সুস্মিত হালদার, সামসুদ্দিন বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৫
Share: Save:

বছরের পর বছর একই স্কুলে জোয়াল টেনে যাচ্ছেন কেউ। একঘেয়ে জীবন।

কেউ আবার শহরে বড় হয়েছেন, কিন্তু বাড়ি থেকে বহু দূরের গাঁয়ের স্কুলে আটকে আছেন দীর্ঘদিন। অনেক জাগায় দরবার করেও বাড়ির কাছে আসতে পারছেন না।

মিড-ডে মিলের হিসেব-নিকেশ আর রান্নাবাড়ার বন্দোবস্ত করতেই তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছেন কেউ। মত মিলছে না অভিভাবকদের সঙ্গেও।

কারও পিছনে কলকাঠি নাড়েন পরিচালন সমিতির সভাপতি বা স্থানীয় বিধায়ক। স্টাফরুমে ফিসফাস করেন সহ-শিক্ষকেরা, সহযোগিতা পান না কারও।

ফল? হতাশা। অবসাদ।

প্রতিটি স্কুলে যিনি প্রধান কাণ্ডারী, সেই প্রধান শিক্ষকই বহু ক্ষেত্রে আক্রান্ত হচ্ছেন হতাশায়। তাঁদের সেই অবসাদ থেকে বের করে আনতে এবং উজ্জীবিত করতে ক্রীড়াজগৎ থেকে ‘মেন্টাল ট্রেনার’ এনে দু’দিন ধরে শিবির করা হল নদিয়ায়। আয়োজনে নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ।

শিবিরে বক্তা হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছিল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথা বিশ্বজয়ী জাতীয় জুনিয়র হকি দলের মেন্টাল ট্রেনার মৃণাল চক্রবর্তীকে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে জাতীয় দল ছিল তাঁরই ট্রেনিংয়ে। ছিলেন জাতীয় তিরন্দাজ দলেরও মেন্টাল ট্রেনার। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে তেহট্ট ও কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার প্রধান শিক্ষকদের ডাকা হয়েছিল। শুক্রবার রানাঘাটের নজরুল মঞ্চে হাজির ছিলেন রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমার সমস্ত প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা। কী ভাবে হতাশা ঝেড়ে নিজের কাজ আরও ভাল ভাবে করা যায়, তার পাঠ দেওয়া হল।

নদিয়া জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ রায় বলেন, “আমি প্রধান শিক্ষক ছিলাম। জানি, স্কুল চালাতে গিয়ে কী সমস্যা হয়। পরেও প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, অনেকেই নানা কারণে হতাশার শিকার। তার প্রভাব পড়ছে স্কুলের পরিবেশ, পঠনপাঠনে। তাই এই উদ্যোগ।” তেহট্টে শ্রীকৃষ্ণপুর ভিএসএফ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ বিশ্বাস বলেন, “ওখানে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, সমস্ত শিক্ষকদের জন্যই এই ধরনের প্রশিক্ষণ শিবির করা উচিত।”

পাশের জেলা মুর্শিদাবাদেও ছবিটা একই। কিন্তু এমন কোনও উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। লালবাগের শিশুভারতী প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজয় চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের তো জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই করতে হয়! চাপ থেকে অবসাদ বাড়ছে। কাউন্সেলিং করা হলে খুবই উপকার হত।” বেলডাঙার সুতিঘাটা প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হিলালউদ্দিন বলেন, “আগে জানলে নদিয়ার ওই কর্মশালায় আমিও চলে যেতাম।”

যা শুনে মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস বৈশ্য বলেন, “আমরা কিন্তু বিভিন্ন সার্কেলের বৈঠকে শিক্ষকদের মানসিক অবসাদ কাটানোর চেষ্টা করি। তবে নদিয়া যদি সফল হয়, আমরাও এমন শিবির করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE