Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিশু ফেলে হাসপাতাল ছাড়লেন মহিলা

রাস্তার ধারে গাছতলায় এক ভবঘুরে জন্ম দিয়েছিলেন পুত্র সন্তানের। অবসরপ্রাপ্ত এক কলেজ শিক্ষক দেখতে পেয়ে মা এবং সদ্যোজাতকে পৌঁছে দিয়েছিলেন হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে গেলেন সেই ভবঘুরে মহিলা।

বিতান ভট্টাচার্য
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০১:৪৯
Share: Save:

রাস্তার ধারে গাছতলায় এক ভবঘুরে জন্ম দিয়েছিলেন পুত্র সন্তানের। অবসরপ্রাপ্ত এক কলেজ শিক্ষক দেখতে পেয়ে মা এবং সদ্যোজাতকে পৌঁছে দিয়েছিলেন হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে উধাও হয়ে গেলেন সেই ভবঘুরে মহিলা।

কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। গত দু’বছরে এমন সাতজন সদ্যোজাতদের সুস্থ করে হাসপাতাল থেকে হোমে পাঠাতে হয়েছে বলে হাসপাতালের রেকর্ড বলছে। জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ (সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট) এর ইনচার্জ মঞ্জরী বসু বলেন, ‘‘ভবঘুরে ওই মহিলা মানসিক রোগী। হাসপাতালে নাড়ি কাটার পর একবারের জন্যও ছেলেকে দেখতে চাননি। দুধও খাওয়াতে চাননি। বছর দেড়েক আগেও ওই মহিলা অন্তঃসত্তা হয়ে রাস্তার ধারে পড়েছিলেন। তখন একটি কন্যা সন্তান হয়েছিল। সেবারও শেষ পর্যন্ত শিশুটির ঠাঁই হয়েছিল হোমে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্মের পর থেকে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ। আড়াই কেজি ওজন। কিন্তু মায়ের দুধ না পাওয়ায় অন্য সদ্যোজাতদের মায়েদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন চিকিৎসকরা দুধ খাওয়ানোর। ভবঘুরের সন্তান বলে রাজি হননি কেউই। তাই নার্সরাই কেনা দুধ খাওয়াচ্ছেন পরিচর্যাও করছেন পালা করে। শিশুটির মায়ের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে গোড়া থেকেই তাকে এসএনসিইউ’তে রাখার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মা প্রসূতি বিভাগে ছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে একজন প্রসূতি বেরিয়ে চলে গেলেন তা নিয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ছেঁড়াখোড়া মলিন পোশাকের বছর পঁয়তিরিশের ওই মহিলাকে দেখে রোগী বলে ভাবতে পারেননি কেউই। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ারে লোকজনের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। গেটের কাছে এক নিরাপত্তা কর্মী দেখতে পেলে তার সঙ্গে ধল্তাধস্তি করেন বলেও জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নাম না জানলেও চিকিৎসক থেকে চিকিৎসা কর্মী অনেকেই ওই প্রসূতির মুখ চেনেন। হাসপাতালের কাছেই রাস্তার ধারে মাঝে মধ্যে তাকে কাঠকুটো দিয়ে উনুন জ্বালিয়ে রান্না করতে দেখা যেত তাঁকে। তিনি যে অন্তঃসত্তা হয়েছেন তা’ও দেখেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু ভবঘুরে বলে বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি কেউই। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এমন ফুটফুটে শিশুটার ভবিষ্যৎ কি হবে কে জানে! আমরা মা’কেও খুঁজছি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ওই মহিলা যাতে আর অন্তঃসত্তা না হতে পারেন আগে সেই ব্যবস্থাটা করা দরকার।’’

কি বলছেন ওই শিক্ষক? দীর্ঘদিন কল্যাণী কলেজে অধ্যক্ষ ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অমিয় মুদি। মঙ্গলবার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকের মতো তিনিও ওই ভবঘুরে ও তার সদ্যোজাতকে রাস্তার পাশে নোংরার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। বাকিরা পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও প্রবীণ শিক্ষক পারেননি। গাড়ি করে মা ও সন্তানকে হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসকদের দেখান। তিনি বলেন, ‘‘সভ্য সমাজে এটা হতে পারে না। এই ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য প্রশাসন থেকে নাগরিক সকলেরই এগিয়ে আসা উচিৎ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Newborn Mother Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE