Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মেয়েবেলার বিয়ে রুখে পুরস্কৃত নাজেমা

এক রত্তি মেয়ের জিদের কাছে হার মেনেছিল গোটা পরিবার। সাহস দেখে তাজ্জব বনেছিল গোটা গ্রাম। একাই থানায় গিয়ে রুখেছিল নিজের বিয়ে। সেখানেই থেমে থাকেনি সে। একে একে রুখেছে একাধিক নাবালিকা বান্ধবীর বিয়েও।

মা-ঠাকুমার সঙ্গে নাজেমা।নিজস্ব চিত্র

মা-ঠাকুমার সঙ্গে নাজেমা।নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:২৮
Share: Save:

এক রত্তি মেয়ের জিদের কাছে হার মেনেছিল গোটা পরিবার। সাহস দেখে তাজ্জব বনেছিল গোটা গ্রাম। একাই থানায় গিয়ে রুখেছিল নিজের বিয়ে। সেখানেই থেমে থাকেনি সে। একে একে রুখেছে একাধিক নাবালিকা বান্ধবীর বিয়েও। স্কুলছুটদের ফের ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে স্কুলের আঙিনায়।

সেই ধন্যি মেয়ে নাজেমা খাতুনকে ‘সামাজিক সাহসিকতা’র পুরস্কার দিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের পাঁচ জেলা থেকে যে পাঁচ জন ছাত্রীকে এই পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে, মুর্শিদাবাদ থেকে নাজেমা তাদেরই একজন।

সুতি ২ ব্লকের বিডিও সন্দীপ ভট্টাচার্য জানান, রবিবার রাজ্য নারী ও শিশু সমাজ কল্যাণ দফতর থেকে নাজেমাকে পুরষ্কৃত করার কথা জানানো হয়েছে। বিডিও’র কথায়, “নাজেমার গ্রাম সেলিমপুর সুতির পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলির একটি। নাজেমা সেই গ্রামের রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে। তারই স্বীকৃতি এই পুরস্কার।”

মা-ঠাকুমা বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলেন বারো বছর বয়সে। সেই পথেই মাত্র তেরো বছরেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল নাজেমার। সুপাত্র পেয়ে কিছুতেই তা হাতছাড়া করতে নারাজ ছিলেন না বাড়ির লোকজন। কিন্তু নাজেমার জিদ, ‘‘বিয়ে নয়, স্কুলেই যাব।’’ টানা তিন সপ্তাহ ধরে মা বাবার বিরুদ্ধে লড়তে কখনও উপোষ থেকেছে। কখনও বা ঘরে খিল এঁটেছে অভিমানে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে সরাসরি থানায় হাজির হয়। মা, বাবা-সহ গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঠোকে। বাড়িতে ডেকে আনে পুলিশকে। খবর পেয়ে আসেন বিডিও। শেষে প্রশাসনের কর্তারা বুঝিয়ে বলায় বন্ধ হয় বিয়ে।

বাড়িতে পুলিশ ডেকে আনায় খুব রেগে গিয়েছিলেন মা নুরেখা বিবি। এখন বুঝছেন কত বড় ভুল করেছিলেন। এখন মেয়ের এই সম্মানে কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। নাজেমার এই কাজে তার পাশে দাঁড়িয়েছে একটি স্বেছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সুপারভাইজার বিজয় হাজরা জানান, গত তিন বছরে আমূল বদলে গিয়েছে সেলিমপুর। ১২০ জন স্কুলছুট ছাত্রের সংখ্যা এখন নেমে এসেছে আঠারোতে। দু’বছরে একটিও বাল্য বিবাহের নজির নেই সেলিমপুরে। কুড়ি জনকে নিয়ে কমিটি গড়ে নাজেমাই ভোল বদলাচ্ছেন গ্রামের। রাজ্য সরকারের পুরস্কার তারই স্বীকৃতি। আর নাজেমা বলছেন, ‘‘যতক্ষণ না গাঁয়ের সব ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়তে যাচ্ছে, ততক্ষণ আমি থামছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Government Najima Khatun Minor's Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE