জলপান: স্কুলে জলের জন্য ভরসা নলকূপ। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক
তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু ক্লাসঘরে না আছে পাখা, স্কুলে না আছে গলা ভেজানোর জল। যেখানে যতটুকুও বা আছে, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
হাইস্কুলে যা-ও বা বিদ্যুৎ সংযোগ বা পাখা আছে, বহু প্রাথমিক স্কুল বা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে সেটুকুও নেই। ভাপে প্রায় সেদ্ধ হচ্ছে শিশুর।
নাকাশিপাড়ার রাজাপুর প্রাথমিক স্কুলে বিদ্যুৎ এলেও বিল মেটানোর টাকা শিক্ষা দফতর থেকে আসেনি। ক্লাসঘরে পাখাও লাগানো হয়নি। বছরখানেক ধরে স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। ক্লাস চলাকালীন গরমে অতিষ্ঠ হয়ে খালি বোতল হাতে নলকূপের দিকে ছুটছে ছাত্রছাত্রীরা।
কৃষ্ণনগরের যাত্রাপুর ভূতপাড়া আদিবাসী প্রাথমিক স্কুলের ক্লাসঘরে একটি করে পাখা আছে। আরও একটি করে দরকার। পাখার তলায় কে বসবে তা নিয়ে রোজ ঝগড়াঝাঁটি হয়। প্রধান শিক্ষক প্রণবকুমার সর্দার বলেন, “শিক্ষা দফতর বিদ্যুৎ বিলের টাকা দেয় না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিল মেটান।” একই সমস্যায় ভুগছে লালগোলা মানিকচক হাইমাদ্রাসায়। ডাঙাপাড়া শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের কোনও ঘরে পাখা নেই। ছাত্রেরা জামা খুলে খালি গায়ে বসে। প্রধান সহায়িকা সুনীতি কর্মকারের আক্ষেপ, ‘‘১৭ বছর হয়ে গেল, বিদ্যুৎ এল না।’’
হাইস্কুলগুলিতে বিদ্যুৎ এবং পাখা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট নয়। বহরমপুরে সলুয়াডাঙা হাইস্কুলে কোনও-কোনও ক্লাসঘরে শতাধিক পড়ুয়া। প্রয়োজনের তুলনায় পাখা অর্ধেক। সকলের গায়ে হাওয়া পৌঁছয় না। কাশিমবাজার মহাজন সমিতি হাইস্কুলেও এক অবস্থা। সেবানলিনী হাইস্কুলে প্রতিটি ক্লাসে ছ’টির বদলে তিনটি পাখা। প্রধান শিক্ষিকা অদিতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রশাসন যদি আরও কিছু পাখার বন্দোবস্ত করে দেয়, পড়ুয়ারা স্বস্তিতে ক্লাস করতে পারে।’’
গরমে যখন গলা শুকোচ্ছে, পানীয় জলও বাড়ন্ত। সলুয়াডাঙা হাইস্কুলে খাওয়ার জায়গার কাছে জলের ব্যবস্থা নেই। অফিস ঘরের কাছে ট্যাপ থেকে বোতলে জল নিয়ে যেতে হয়। বহরমপুরে গজধরপাড়া হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১১০০। একটি মাত্র নলকূপ। প্রধান শিক্ষক তমিরুদ্দিন মণ্ডল জানান, কূপের জলে এত আয়রন যে খাওয়ার যোগ্য নয়। কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুল ও গোরাবাজার আইসিআই স্কুলও ভুগছে জলের সমস্যায়। দ্বিতীয়টির প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত জানান, তিনটি নলকূপ থাকলেও জলস্তর নেমে যায়।
এই পরিস্থিতিতে দুপুরের বদলে সকালে স্কুল বসানোর দাবি জোরদার হচ্ছে। হোগলবেড়িয়ার রামগনগর প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের বাবা অজয় প্রামাণিক বলেন, “কষ্টের হাত থেকে পড়ুয়াদের বাঁচাতে স্কুল সকালে বসানো হোক।” নদিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ রায়ের আশ্বাস, “এ ব্যাপারে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির সঙ্গে কথা বলব।” তবে যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকা দূর থেকে যাতায়াত করেন তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার দিকটাও মাথায় রাখা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy