Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র গরমে তেষ্টার জলও নেই হাসপাতালে

প্রচণ্ড গরমে জলের জন্য নাগাড়ে কেঁদে চলেছে নবগ্রামের রসবা বিবির একরত্তি ছেলে। জলের জন্য হন্যে হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ, বহরমপুর মাতৃসদনের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরে বেড়ালেন রসবা। কিন্তু জল পেলেন না। বোতল হাতে ছুটলেন পাশের একটি হোটেলে। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে সেখান থেকেই বোতলে জল ভরে নিয়ে এলেন তিনি।

নলকূপ অকেজো। খালি বোতল হাতে জলের সন্ধান বহরমপুর মাতৃসদনে ।

নলকূপ অকেজো। খালি বোতল হাতে জলের সন্ধান বহরমপুর মাতৃসদনে ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

প্রচণ্ড গরমে জলের জন্য নাগাড়ে কেঁদে চলেছে নবগ্রামের রসবা বিবির একরত্তি ছেলে। জলের জন্য হন্যে হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ, বহরমপুর মাতৃসদনের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরে বেড়ালেন রসবা। কিন্তু জল পেলেন না। বোতল হাতে ছুটলেন পাশের একটি হোটেলে। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে সেখান থেকেই বোতলে জল ভরে নিয়ে এলেন তিনি।

রসবা বিবি একা নন। বহরমপুর মাতৃসদন হাসপাতালে পানীয় জলের জন্য ভুগতে হচ্ছে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে নলকূপটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ সেটাকে মেরামত করার ব্যপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও হুঁশ নেই। ক্ষুব্ধ রসবা বিবি বলছেন, ‘‘আমার এক আত্মীয় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকেই দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এই গরমে হাসপাতালে একটু জলও মিলছে না।’’

একই অভিযোগ মালদহের সুজাপুরের পিন্টু শেখেরও। পিন্টুবাবুর স্ত্রী ভর্তি রয়েছেন ওই হাসপাতালে। পিন্টুবাবু বলছেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করেও স্বস্তি নেই। ওষুধপত্র তো বাইরে থেকে কিনতেই হচ্ছে। এমনকী পানীয় জলটুকুও এখানে মিলছে না। বাইরে থেকে জল কিনতে হচ্ছে।’’ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পানীয় জলের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে অবিলম্বে তার সমাধান করা হবে।’’


শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে বেহাল নলকূপ।

পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালেও। এখানেও বাধ্য হয়েই রোগী ও তাঁর পরিজনেরা বাইরে থেকে জলের বোতল কিনছেন। গত পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন যমশেরপুর গ্রামের আনুরা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে যে জল মিলছে তা পানের অযোগ্য। বাধ্য হয়েই বাইরে থেকে জল কিনতে হচ্ছে।’’ হাসপাতালের সুপার রাজীব ঘোষ বলেন, ‘‘জলের সমস্যা রয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে সেই সমস্যার সমাধানও হয়ে যাবে।’’ তবে রোগী ও রোগীর বাড়ির লোকজনের বক্তব্য, এই গরমেও যদি জলের সমস্যা দূর না হয় তবে আর কবে হবে? জল সঙ্কটের পাশাপাশি গরমেও নাজেহাল হচ্ছেন রোগীরা। লোডশেডিং হলে সবথেকে সমস্যা হয় প্রসূতি বিভাগে। কেন? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি লোডশেডিংয়ের সময় প্রসূতি বিভাগের পাখা চলে না। এক্ষেত্রেও সুপারের আশ্বাস, ‘‘দ্রুত পাখা চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ট্যাঙ্কের জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সেই ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেই জলও পানের অযোগ্য। রোগীদের জন্য পরিস্রুত পানীয় জলের কল বসানো হলেও সেই জল বেশিরভাগ রোগীরা পান না। কারণ সেই কলগুলি বসানো হয়েছে চতুর্থ শ্রেিণর কর্মীদের ঘরে। রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকেরা সেটা দেখতে পাননা। আবার বাইরে যে ক’টি গভীর নলকূপ আছ সেগুলিও খারাপ হয়ে পড়ে আছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর থেকে হাসপাতাল চত্বরে একটি জলাধার বসিয়েছে। সেটারও অবস্থা বেহাল। বাধ্য হয়ে তাই রোগীর বাড়ির লোকজনকে বাইরে থেকে জল কিনতে হচ্ছে।

ছবিটা একই রকম বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। হাসপাতালের তিনটি নলকূপ দীর্ঘদিন ধরে খারাপ। হাসপাতালেরজল সঙ্কটের সমস্যা মেনে নিয়ে সুপার দেবদত্ত বড়াল বলেন, ‘‘হাসপাতালের বেশিরভাগ নলকূপ বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। একটি নলকূপে জল মেলে। কিন্তু সেটা আর্সেনিকমুক্ত কি না জানা নেই। এই গোটা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’’

— নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE