সামনের মাঘেই ছেলের বিয়ে পাকা করে সে দিন বাড়ি ফিরেছিলেন গোবর্ধনবাবু। বীরভূমের গগনপুরে হবু পাত্রীর বাড়ি থেকে ফিরেই তাঁকে দেখতে হয়েছিল, ছেলের নিথর দেহ। তাঁর গলায় থেকে থেকেই হা-হুতাশ, ‘ছেলেটা কেন যে ওই সময় রাস্তায় বেরলো!’
রবিবার বিকেলে বেপরোয়া বাইক চালানোর শিকার সুদীপ্ত রবিদাস দাঁড়িয়ে ছিলেন রাস্তার পাশে, একটি বিদ্যুতের খুঁটির পাশে। প্রায় উড়ে আসা গতিতে তিন বাইক আরোহী গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পরে সটান এসে ধাক্কা মারে ওই খুঁটিতে। তার ছিঁড়ে ঘটনাস্থলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান সুদীপ্ত।
আর, তার পরেই আশপাশের লোকজন রে রে করে ছুটে এসে শুরু করেন গণপ্রহার। ঘটনাস্থলেই মারা যান এক বাইক আরোহী। গুরুতর আহত অন্য দু’জন এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
রাজানগর ও আইলেরউপর পাশাপাশি দুটি গ্রাম। রবিবার বিকেলে, দুর্ঘটনা ও গণপিটুনিতে দুই গ্রামের দু’জনের মৃত্যুতে দিনে দুপুরেও যেন অমাবস্যার ছায়া দুই গ্রামে।
তবে, ওই ঘটনাকে ঘিরে দু’গ্রামের সম্পর্কে টানাপড়েনের আশঙ্কায় বসেছে পুলিশ প্রহরা।
রুজির উপায় খুঁজতে লছিমনকেই বেছে নিয়েছিল সুদীপ্ত। রাজানগরে সড়ক লাগোয়া বাড়ি। তাই খাওয়া দাওয়া সেরে নিজের বাড়ির পাশেই চার বন্ধু মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিল সুদীপ্ত। তখনই আইলেরউপর গ্রামের দিক থেকে আসা ওই মোটরবাইকটিপ্রবল গতিতে এসে ধাক্কা মারে রাস্তার পাশে ওই বিদ্যুতের খুঁটিতে। হাই ভোল্টেজের তার ঝোলানো খুঁটিটি ভেঙে আছড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার। নিমেষে পুড়ে নিথর হয়ে যায় সুদীপ্ত। আহত হয় তাঁর
তিন বন্ধুও।
খবর ছড়াতেই রাজানগর থেকে ছুটে আসেন গ্রামবাসীরা। তিন বাইক আরোহীকে তুলে পাশেই একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে শুরু হয় গণধোলাই। পুলিশ এসে জখমদের উদ্ধার করে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান বাপন মণ্ডল। বাপন জঙ্গিপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
হাসপাতালের শয্যায় আহত রাজেশ জানান, গত বছর তিনিই বাইকটি কেনেন। এ দিন বন্ধু বাপন বাইকটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন রাজানগরের দিকে। তখনই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। রাজেশের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার পর এলাকার লোকজন ছুটে এসে আমাদের গাছে বেঁধে পেটাতে থাকে। অনেক অনুরোধ করলেও
রেহাই মেলেনি।’’
সোমবার দুপুরেও রাজানগর জুড়ে শোকের ছায়া। সুদীপ্তের মা উঠোনে বসে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, ‘‘রোজই তো ছেলেটা দুপুরে একটু বিশ্রাম নিত, কেন যে ওই দিন আড্ডা মারতে গেল!’’
শোক ছেয়ে আছে পাশের গ্রামেও। কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে হারিয়ে শিখা মণ্ডল প্রলাপ বকে চলেছেন, ‘‘কত বার বারণ করি বাইক চালাসনি বাপ, কত বার বারণ করি...!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy