Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

চালক, তোমার হেলমেট কই

মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেই বুদ্ধদেববাবু মারা গিয়েছেন বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের একাংশের দাবি, মাথায় হেলমেট থাকলে বুদ্ধদেববাবু মারা যেতেন না।

ফাঁকা-মাথা: মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা-মাথা: মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০২:১৭
Share: Save:

আরও কত মৃত্যু হলে মাথায় উঠবে হেলমেট?

প্রশ্নটা নতুন নয়। কিন্তু নাগাড়ে যে ভাবে একের পর এক দুর্ঘটনায় হেলমেট না মরার মাসুল গুনতে হচ্ছে তাতে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

মঙ্গলবারে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক পুলিশকর্মীর। তাঁর নাম বুদ্ধদেব কুণ্ডু (৩৭)। বাড়ি কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগর এলাকা। তিনি জেলা পুলিশের এনভিএফ পদে পুলিশ সুপারের বাংলোয় কর্মরত ছিলেন। মঙ্গলবার বেলা এগারোটা নাগাদ মোটরবাইকে তিনি পুলিশ লাইনে আসছিলেন। মাথায় হেলমেট ছিল না। সেই সময় জেলা প্রশাসনিক ভবনের কাছে কৃষ্ণনগর হোলি ফ্যামিলি গার্লস হাই স্কুলের পাশে উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মারে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি মারা যান।

মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেই বুদ্ধদেববাবু মারা গিয়েছেন বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের একাংশের দাবি, মাথায় হেলমেট থাকলে বুদ্ধদেববাবু মারা যেতেন না। বুদ্ধদেববাবু একা নন, প্রায় প্রতিদিনই নদিয়া মুর্শিদাবাদের কোথাও না কোথাও হেলমেট ছাড়া বাইক চালাতে দেখা যাচ্ছে বহু চালক ও আরোহীকে। ঘটছে দুর্ঘটনাও। কেউ জখম হচ্ছেন, কেউ মারা যাচ্ছেন। সোমবার, ইদের দিনেও বহু যুবককে হেলমেট ছাড়াই বাইক চালাতে দেখা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, পুলিশ হেলমেটহীন কাউকে দেখলেই তাঁকে হেলমেট পরতে বলেছে। তবে উৎসবের দিন বলেই তেমন ভাবে কাউকে কিছু বলা হয়নি।

গত বছর ইদের দিনেই মুর্শিদাবাদে এমন বেপরোয়া ভাবে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর ফলে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। দৌলতাবাদের ছয়ঘরি এলাকায় দু’জনের মৃত্যুও হয়েছিল। বলাই বাহুল্য, তাঁদের মাথায় হেলমেট ছিল না। দৌলতাবাদ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলছেন, ‘‘স্রেফ মাথায় হেলমেট না থাকার জন্য ছেলে দু’জন মারা গিয়েছিল। ইদের দিন শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। আর যাইহোক, হেলমেট পরলে তাঁরা অন্তত মারা যেত না।’’

অথচ মাথায় হেলমেট তুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টাও বড় কম হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ স্লোগানের পরে কড়া অবস্থান নিয়েছিল জেলা পুলিশ। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল না দেওয়ার পাশাপাশি মোটা টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন স্তরে টানা প্রচার কর্মসূচি চালিয়ে আসছে বিভিন্ন থানার পুলিশ।

কখনও হেলমেট পরার জন্য পড়ুয়ারা চালকদের হাতে তুলে দিয়েছে। কখনও গাঁধীগিরি করে হেলমেট পরার অনুরোধ জানিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে গোলাপ। হেলমেট না থাকার জন্য পুলিশ কখনও বাইক থেকে নামিয়ে বাসেও তুলে দিয়েছে। হরিণঘাটা এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মৃত্যুর খতিয়ান দিয়ে পুলিশ প্রচার করেছিল হেলমেট না পরলে কী হয়।

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বহু পুলিশকর্মীকেও হেলমেট ছাড়াই ঘুরতে দেখা যায় দুই জেলাতে। বিষয়টি সামনে এলে একাধিক পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। কাউকে কাউকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তও করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও যে অবস্থার বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি তা এ দিন ফের প্রমাণ হয়ে গেল।

জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশকর্মীদের মধ্যেও আমরা নানা ভারে প্রচার করেছি। এমনকী হেলমেট না পরার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে একাধিক পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে। আমরা আরও নানা ভাবে প্রচার ও সচেতন করব।”

তার পরেও কি হুঁশ ফিরবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE