গ্যাঁটের কড়ি খরচ করলে জেলে বসেই মিলবে বিরিয়ানি। সঙ্গে চিকেন কষা। কিংবা বিকালে ইচ্ছে হলে পাওয়া যাবে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা শিঙ্গাড়া। ফ্রায়েড রাইস, চাউমিন, চাইলে মিলবে তা-ও।
তবে হ্যাঁ, এর জন্য খুঁজতে হবে না পিছনের রাস্তা। ‘খুশি’ করতে হবে না সংশোধনাগারের কোনও কর্মীকে। কারণ কালীপুজোর দিনই কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারে আবাসিকদের জন্য চালু হচ্ছে ক্যান্টিন। সেখানেই মিলবে নানা সংস্থার শুকনো খাবার থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁয় মেলে এমন সব জিভে জল আনা খাবার।
কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারের সুপার স্বপন ঘোষ বলেন, “আমরা চাই সংশোধনাগারের আবাসিকরাও তাদের একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পান। তার জন্য আমরা যেমন ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি, তেমনই ক্যান্টিন চালু করতে চলেছি। সে জন্য সাজাপ্রাপ্ত আবাসিকদের নিয়ে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী করা হয়েছে।”
সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ জন সাজাপ্রাপ্ত আবাসিককে নিয়ে একটি স্বনির্ভর দল গঠন করা হয়েছে। যাঁরা বিভিন্ন রকম রান্নায় ওস্তাদ, তাঁরাই চালাবেন এই ক্যান্টিন। লাভের ৫০ শতাংশ পাবেন তাঁরা আর বাকি ৫০ শতাংশ চলে যাবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিজনার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড’-এ।
কিন্তু এই ক্যান্টিন চালাতে গেলে তো প্রয়োজন পুঁজির? সেটা আসবে কোথা থেকে? সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিটি সাজাপ্রাপ্ত আবাসিক সংশোধনাগারের ভিতরে কাজের জন্য নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পান। সেটা জমা থাকে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে। তাঁদের সঞ্চিত সেই পারিশ্রমিকের টাকা নিয়েই দশ জন সাজাপ্রাপ্ত আবাসিক ক্যান্টিন চালু করছেন।
সেই ক্যান্টিন থেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে মিলবে নানা রকম খাবার। এর আগে এই ধরনের ক্যান্টিন চালু হয়েছে আলিপুর, দমদম, প্রেসিডেন্সি-সহ মেদিনীপুর, বহরমপুরের মত জেলার সংশোধনাগারে। কোনও কোনও সংশোধনাগারে এই ক্যান্টিনের আয় হচ্ছে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা। অন্তত এমনটাই দাবি করেছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারেও এই পরিমান লাভ হবে, আশা করছেন তাঁরা। সংশোধনাগারের এক কর্তার কথায়, “কেন লাভ হবে না? আরে ভাল খাবার তো খেতে ইচ্ছা করে সকলেরই। আমাদের সংশোধনাগারের ভিতরে যে খাবার দেওয়া হয়, তার স্বাদ যে খুব আহামরি নয়, সেটা কম-বেশি সকলেরই জানা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পরিবারের লোকজন যখন দেখা করতে আসেন, তখন তাঁরা হয়তো হাতে করে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে আসেন। মুখ বদল বা স্বাদ বদল বলতে এইটুকুই।” তাঁর কথায়, “সে সবও যে খুব সুস্বাদু খাবার হয়, তা নয়। বিস্কুট কিংবা কেক। হয়ত কেউ দিয়ে যায় চিঁড়ে ভাজার প্যাকেট, চানাচুর।”
শুধু কি তাই? দিনের একটা বড় সময় তাঁরা চাইলেও খাবার পান না। দুপুরের খাবার আসে বেলা একটা-দেড়টা নাগাদ। আর রাতের খাবার মিলে যায় পাঁচটায়। সেই খাবার নিয়ে ঢুকে পড়তে হয় নিজের নিজের ওয়ার্ডে। ফলে এই ধরনের ক্যান্টিন হলে, অনেকেই সেখান থেকে খাবার কিনে খেতে পারবেন। মনে করছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।
আর কয়েকটা দিন। তার পর সংশোধনাগারের ভিতরে আবাসিকদের হাতে যত্ন করে পোঁতা বেল আর জুঁইফুলের গন্ধের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে বিরিয়ানি-চাউমিনের গন্ধ। সেই অপেক্ষাতেই সংশোধনাগারের প্রায় হাজার খানেক আবাসিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy