Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রিঙ্কুদের টার্গেট এখন ভোরের চাকদহ এক্সপ্রেস

এখন আর তেমন ছিপছিপে নেই, মাঝ তিরিশের ছায়া পড়েছে চেহারায়। তা হোক, একের পর এক উইকেট নিয়ে সে যখন বাজ পাখির মতো উড়ছে, তামাম দেশের মনে হয়েছিল, লর্ডসের মাঠে নদিয়ার এই ছোট্ট শহরটা আশার মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে যেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৮:১০
Share: Save:

ষোলো পা রান আপ নিয়ে যেন বল করতে ছুটছে মেয়েটা। ছ’টা দশের লোকাল, লম্বা বিনুনি সাপটে পড়ছে পিঠের ওপর— হাঁফাতে হাঁফাতে চাকদহ স্টেশনে এসে দাঁড়াল মেয়েটা। রবিবার, শ্রাবণ বিকেলে চেনা রান আপ বোধহয় কিছুটা খাটো হয়ে এল।

বারো বছর আগে, ফাল্গুনের এক বিকেলে প্রথম বার যখন হেরে গিয়েছিল সে, বিদেশ ফেরত তার হদ্দ মফসসলের চেনা স্টেশনে পা রেখেই দেখেছিল, তার জন্য অপেক্ষা করছে হুডখোলা জিপ— এক চোখ জল নিয়ে বিড় বিড় করেছিল সে ‘‘পরের বার ঠিক জিতব, জিততেই হবে!’’

হল না, রবিবারের শ্রাবণ রাতে ফের মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। এখন আর তেমন ছিপছিপে নেই, মাঝ তিরিশের ছায়া পড়েছে চেহারায়। তা হোক, একের পর এক উইকেট নিয়ে সে যখন বাজ পাখির মতো উড়ছে, তামাম দেশের মনে হয়েছিল, লর্ডসের মাঠে নদিয়ার এই ছোট্ট শহরটা আশার মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে যেন।

তবুও, সেই হেরে যাওয়া। ঈষৎ চাপা গায়ের রং এ বার পনি টেল— মায়ের কাছে রাতের ফোনে মেয়েটা বলছে, ‘পারলাম না মা, এ বারও সেই খালি হাত, ভাল লাগছে না আর!’ তবে, চাকদহ এ বারও তার জন্য হুড খোলা জিপ নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে, চক দে চাকদহ এক্সপ্রেস, উপচানো ভিড়টাকে কী বলবে সে?

শহরটা এখনও তাকে ভালবাসে। কবেকার চেনা সেই চাকদহ শহরটা এখনও আগের মতোই আষ্টেপৃষ্টে তাকে আঁকড়ে স্বপ্ন দেখে যে। এ দিনও লালপুরের গলির মুখে চায়ের দোকানে কথা কাটাকাটি চলছে, ‘‘একা দিদিভাই কি করবে, বাকিরা অমন উইকেট ছুড়ে না দিলে...!’’ সাইকেলে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়ার সময় মেয়েদের কলকলি, ‘‘দিদি কেমন একের পর এক উইকেট তুলে নিচ্ছিল বল!’’ যেন তাদের নিজের বড়দির সাফল্যে সেঁকে নিচ্ছে ওরা পরস্পরকে।

চাকদহ ছাড়িয়ে দিদিভাই এখন পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের কোচিং সেন্টারগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। করিমপুরে রিঙ্কু শর্মা সরাসরি ঝুলনের সান্নিধ্য পেয়েছেন, ‘‘টেনশনটা কী করে রিলিজ করতে হয় ওঁর কাছ থেকে শেখা। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির রুকসানা খাতুনও দিদিভাইয়ের মতো কলকাতায় ক্লাব পেয়ে গিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘এই বয়সে এমন দাপুটে বোলিং আমার অনেক দিন মনে থাকবে। ভাবতে পারেন চৌত্রিশেও কেমন ছুটছেন।’’ সেই লম্বা দৌড়ে নিশ্চুপে বুঝি জিতেই গিয়েছেন চাকদহ এক্সপ্রেস। মফসসলের নিঝুম গ্রাম-শহরের মুখগুলোরও এখন টার্গেট, ভোরের চাকদহ এক্সপ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE