সবে-মিলে। নিজস্ব চিত্র
মসৃণ পিচ রাস্তা থেকে নেমেই খেতে হতো মোক্ষম হোঁচট— এটা রাস্তা না আলপথ!
সাকুল্যে ওই দেড় কিলোমিটার রাস্তা নিয়ে এতদিন সাগরদিঘির বাহালনগরের ভোগান্তির শেষ ছিল না। হাট-বাজার, স্টেশন, স্কুল, মসজিদ, ইদগাহ, কবরস্থান সবই তো ওই পথে। টানা পাঁচ বছর ধরে পথের দাবি নিয়ে বহু বার প্রশাসনের দারস্থ হয়েছে বাহালনগর। কিন্তু সে দাবি পূরণ হয়নি।
দিনকয়েক আগে গ্রামের মসজিদে নমাজ পড়তে গিয়েছিলেন সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল জাব্বার। রাস্তায় পড়ে জখম হন তিনি। তারপরেই তিনি পণ করেন, প্রশাসনের ভরসায় না থেকে চাঁদা তুলে রাস্তা গড়া হবে। আব্দুলের কথায় রাজি হন গ্রামের সকলেই। কুলুঙ্গি থেকে কষ্ট করে জমানো পাঁচশো টাকা বের করে দিয়ে বের করে দিয়ে সামিরুন বিবি বলেছেন, ‘‘ইদে খরচ কম করব। আগে রাস্তাটা হোক।’’
বাড়ি ফিরছিলেন পেশায় দিনমজুর জিকিরিয়া শেখ। সারাদিনে দু’শো টাকা আয়ের মধ্যে একশো টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘রাস্তার যে কোনও কাজে আমাকে ডাকলেই চলে আসব।’’ ক’দিন বাড়িতে ছিলেন না ব্যবসায়ী বাহারুল হক। রাস্তা গড়ার খবর পেয়ে তিনিও এক হাজার টাকা তুলে দিয়ে বলেছেন, ‘‘নতুন রাস্তা চাই-ই চাই।” এগিয়ে আসেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ থেকে গ্রামের সকলেই।
কাজও শুরু হয়েছিল পুরোদমে। ইদের আগেই রাস্তার কাজ শেষ করতে হবে যে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাজিবুল শেখের মাথায় ঝুড়ি বোঝাই পাথর। কোদাল হাতে হাসিবুর শেখ কাদা সরিয়েছেন। ফেরিওয়ালা ফৈজুদ্দিন শেখ বয়ে এনেছেন আধলা ইট। ভরদুপুরে কাজ সেরে ঘরে ফিরছিলেন আদিবাসী লক্ষী সর্দার। শাড়ির আঁচল থেকে ২০ টাকা বের করে দেন। তারপর ‘‘গাঁয়ের কাজ, আর আমি কিছু করব না?’’ বলে কোদাল হাতে তিনিও ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
আজ, সোমবার গ্রামের লোকজন সেই নতুন রাস্তা দিয়েই যাবেন ইদগাহে। গ্রামের আলিমুজ্জামান শেখ বলছেন, “মরেও শান্তি ছিল না। জানাজায় যেতে হতো কাদা ভেঙে।’’ বদরুল হক বলছেন, “কেউ দিয়েছেন নগদ টাকা। কেউ নিজেরাই নলহাটি থেকে লরি বোঝাই পাথরের গুঁড়ো কিনে এনেছেন। গ্রামের দুটি মসজিদ কমিটি দিয়েছে ১০ ও ৮ হাজার টাকা।” সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকলেমা বিবি জানান, পঞ্চায়েত সমিতি নিয়ে মামলা চলায় ৩ বছর সমস্ত উন্নয়নের কাজ বন্ধ ছিল। ব্লকের রাস্তা সংস্কারের জন্য ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার টেন্ডার করা হয়েছে। বাহালনগরও তালিকায় রয়েছে। ইদের পরেই সে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy