Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাবাকে নয়, স্কুল ডাকছে মায়েদেরই

কী ভাবে ছেলেমেয়েদের সামাল দিতে হবে, তা নিয়ে কথা বলতে তাই মায়েদেরই জড়ো করেছে জলঙ্গির সাদিখাঁড়দিয়াড় বিদ্যানিকেতন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুজাউদ্দিন ও মনিরুল শেখ
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ১২:৫২
Share: Save:

বাবা কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

অনেকেই কাজের জন্য রয়েছেন অন্য শহরে বা ভিন্ রাজ্যে। তাই স্কুল থেকে টিউশন, ছেলেমেয়ের পড়ার খোঁজ রাখতে শুরু করেছেন মায়েরাই।

কী ভাবে ছেলেমেয়েদের সামাল দিতে হবে, তা নিয়ে কথা বলতে তাই মায়েদেরই জড়ো করেছে জলঙ্গির সাদিখাঁড়দিয়াড় বিদ্যানিকেতন। মঙ্গল থেকে শনিবার পর্যন্ত রোজ বিকেলে হচ্ছে মাতৃ সচেতনতা শিবির। রোজ এক-একটি শ্রেণির পড়ুয়ার মায়েদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাতলে দিচ্ছেন — কী ভাবে ছেলেমেয়েকে বিছানা থেকে তুলবেন, কী ভাবে ব্রাশ করাবেন, নখ কাটবেন, নজর দেবেন পোশাকেও।

দশম শ্রেণির এক ছাত্রের মা ঝর্না বিবি বলেন, ‘‘সন্তানদের দিকে ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতে হয় আমাদের। কিন্তু স্কুলে সভা হলে ডাক পড়ে বাবাদের। ফলে দুরত্ব তৈরি হচ্ছিল। সভায় এসে অনেক অজানা বিষয় জানা গেল। পড়াতে গিয়ে সমস্যা হলেও ফোনে সমাধান জানা যাবে বলে জানান শিক্ষকেরা।’’ শিক্ষকরা বলছেন, বাবা আলোচনায় এলে ছেলেমেয়ে সম্পর্কে অনেক কিছুই বলতে পারেন না। অর্থহীন সভা হয়। এত দিনে একটা ঠিকঠাক শিবির হচ্ছে।

শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, নদিয়াতেও চাপড়া, তেহট্ট, করিমপুর, কালীগঞ্জ, রানাঘাটের মতো এলাকার লোকজন বাইরে কাজ করেন। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও হাই মাদ্রাসা মিলিয়ে অন্তত ৬০০টি স্কুল রয়েছে জেলায়। বহু স্কুলেরই শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বাবা বাইরে থাকলে তো কথাই নেই, এলাকায় থাকলেও মায়েরাই ভাল বলতে পারেন ছেলেমেয়ের সম্পর্কে। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করা থেকে তিন মাস অন্তর অভিভাবক সভায় যোগ দেওয়া, গৃহশিক্ষক ঠিক করা—সবই সামলান মায়েরা। ধুবুলিয়া দেশবন্ধু হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলি বিশ্বাস জানান, তাঁদের স্কুলে অভিভাবক সভায় বাবারা আসেন খুব কম। বছর দশেক ধরেই এই চিত্রটা দেখা যাচ্ছে। চাপড়ার রুমা মোল্লার স্বামী বছর তেরো ধরে দুবাইয়ে। মেয়ে পারভিন সুলতানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। অভিভাবক সভায় রুমাই যান। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের পুরো দায়িত্ব তো আমাকেই সামলাতে হয়।’’ চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ার অনুফা খাতুন বলেন, ‘‘বছর সাতেক ধরে গৃহশিক্ষকতা করছি। দেখেছি, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খোঁজ মায়েরাই রাখেন।’’

সাদিখাঁড়দিয়াড় বিদ্যানিকেতনের শিবিরে উঠে দাঁড়িয়ে এক ছাত্রীর মা প্রশ্ন করেন, ‘‘মেয়ের পড়তে বসলেই ঘুম পায়। কী করি বলুন তো স্যার?’’ নিদান বাতলান বাংলা শিক্ষক দীপক মজুমদার— ‘‘যে সময়ে ও ঘুম পায়, তখন ওর সঙ্গে গল্প করুন, টিভি খুলে দিন কিছুক্ষণ। ঘুম কেটে গেলে আবার পড়তে বসান।’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সামসুল হোদা বলেন, ‘‘অনেক নতুন প্রশ্ন আসছে, যা পরে আমাদেরও পথ দেখাবে।’’

মুর্শিদাবাদের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। অন্য স্কুলগুলিও এই পথ নিতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Parents Mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE