Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে খাবার ঘর নেই, পাত পড়ে মাঠেই

মুর্শিদাবাদে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুল মিলিয়ে ৫ হাজার ৮৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। প্রায় ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৭৪ জন খায়। নদিয়ায় সে রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪ হাজার ১০৯টি, যেখানে পাত পড়ে ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০৯ জনের।

খাবার: রাস্তায় সারা দুপুরের ভোজ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

খাবার: রাস্তায় সারা দুপুরের ভোজ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৫
Share: Save:

স্কুল চত্বরে ফাঁকা জায়গায় সার দিয়ে বসে মিড-ডে মিল খাচ্ছে কচিকাঁচারা। আর আশপাশেই ঘুরছে কুকুর-গরু।

এই চিত্র খোদ বহরমপুর শহরের মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের। স্কুলে ডাইনিং হল নেই। ওই চত্বরে রয়েছে মহারানী কাশীশ্বরী নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ও। সেখানকার পড়ুয়াদেরও খোলা আকাশের নীচে বসে খেতে হয়। সত্যি বলতে, নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বহু স্কুলেই ডাইনিং হল নেই। খোলা জায়গায়, ক্লাসঘরে বা বারান্দায় পড়ুয়াদের খেতে দেওয়া হয়।

মুর্শিদাবাদে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুল মিলিয়ে ৫ হাজার ৮৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। প্রায় ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৭৪ জন খায়। নদিয়ায় সে রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪ হাজার ১০৯টি, যেখানে পাত পড়ে ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০৯ জনের। এর বেশির ভাগ জায়গাতেই কোনও খাবার ঘর নেই।

কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ১৮৬৫ পড়ুয়ার মধ্যে রোজ ৫০০-৬০০ জন মিড-ডে মিল খায়। প্রধান শিক্ষিকা চৈতালি চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের ১২ বিঘা জমি ঘিরে পাঁচিল নিচু, ফলে কুকুর সহজে ঢুকে পড়ে। প্রাথমিক স্কুল আগে ছুটি হয়। সে দিকের দরজা আগে খুলে যাওয়ায় গরুও ঢোকে মাঝেমধ্যে। অষ্টম শ্রেণি ছাত্রী জুলেখা খাতুন, রিচা মণ্ডলেরা জানায়, বৃষ্টি হলে তারা বারান্দায় খায়, না হলে খোলা আকাশের নীচে।

ডাইনিং হল নেই রানিনগরের রামনগর হাই মাদ্রাসাতেও। পড়ুয়াদের কাঁঠাল গাছের নীচে বা বাঁশতলায় বসে মিড-ডে মিল খেতে হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুল হক মেনে নেন, “ডাইনিং হল না থাকায় কিছু পড়ুয়া খোলা আকাশের নীচেও খায়। এখানে ডাইনিং হল করার জায়গাও নেই। ফলে খুব সমস্যা।” নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় বীরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১৫০ জন মিড-ডে মিল খায়। স্কুলে একটি ছোট ডাইনিং হল হয়েছে জেলা পরিষদের টাকায়। তবে বেশির ভাগই বারান্দা বা মাঠে বসে খায়।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, স্কুলে ডাইনিং হলের জন্য কোনও আলাদা প্রকল্প নেই। মুর্শিদাবাদে মিড-ডে মিল তহবিলের সুদের প্রায় ১০ কোটি টাকা রয়েছে। ওই টাকার সঙ্গে অন্য তহবিলের টাকা দিয়ে ডাইনিং হল করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। ব্লক অফিসগুলি সমীক্ষাও শুরু করেছে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “এ বছরেই জেলায় এক হাজার স্কুলে ডাইনিং হল করা হবে। প্রয়োজনে রাজ্য থেকে টাকা চাওয়া হবে।”

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “বিধায়ক এলাকায় উন্নয়ন তহবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্পে ইতিমধ্যে কিছু স্কুলে ডাইনিং হল করা হয়েছে। স্কুলগুলি আবেদন করলে সরকারের কাছে তা পাঠিয়ে অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE