Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভেজাল রুখতে বার্তা মায়ের ভোগে

পুজো কমিটির কর্তারা জানাচ্ছেন, অন্নভোগের রঙে। কারণ দীর্ঘ দিনের প্রথা ভেঙে হলুদের বদলে ভোগ দেওয়া হবে সাদা পোলাও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:১০
Share: Save:

খাদ্যে ভেজাল নয়। এ বছর শান্তিপুরের আগমেশ্বরী কালীপুজো কমিটির বার্তা এটাই। অথচ সে জন্য ফেস্টুন-প্রচার-থিম নেই। তা হলে সে বার্তা লোকে জানবে কী করে?

পুজো কমিটির কর্তারা জানাচ্ছেন, অন্নভোগের রঙে। কারণ দীর্ঘ দিনের প্রথা ভেঙে হলুদের বদলে ভোগ দেওয়া হবে সাদা পোলাও। অর্থাৎ, পোলাওয়ে কোনও রং দেওয়া হবে না। উদ্যোক্তাদের দাবি, লোকজনকে সচেতন করতেই প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো পুজোর ভোগে এমন বদল।

শান্তিপুরের ফুলিয়ায় ভেজাল ঘি, গোবিন্দপুরে ভেজাল তেল, নবদ্বীপে ভেজাল আলু চিপস, নাকাশি পাড়ায় ভেজাল ধনে, কালো জিরে, কালীগঞ্জে ভেজাল দুধ—গত এক বছরে ভেজালের তালিকাটা দীর্ঘতর হয়েছে। কখনও সিআইডি, কখনও পুলিশ সেই ভেজাল সামগ্রী উদ্ধার করেছে। ধরাও পড়েছে বেশ কয়েক জন। তাই খাদ্যে ভেজাল নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে ও ভেজাল রুখতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুজো কমিটি।

প্রতি বছর ১৪ কুইন্টাল চালের পোলাও হয়। সেই পোলাও ভোগ হিসাবে নিয়ে যান হাজার পঞ্চাশেক মানুষ। সেই চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ বার আরও এক কুইন্টাল বেশি চালের পোলাও রান্না হবে। পরিচালন সমিতির সম্পাদক কাশীনাথ গোস্বামী বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের প্রধান উদ্দেশ্য হল, খাদ্যে ভেজাল সংক্রান্ত বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা এবং ভেজাল থেকে দূরে থাকা।’’ তাই বেশি টাকা খরচ হলেও স্থানীয় ঘি বাদ দিয়ে এক নামী কোম্পানির ঘি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুজো কর্তারা।

জানা যায়, নবদ্বীপের তন্ত্রাচার্য কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের প্রপৌত্র সার্বভৌম আগমবাগীশের সঙ্গে মথুরেশ গোস্বামীর মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তিনি শান্তিপুরেই বসবাস করতে শুরু করেন। কিন্তু মথুরেশ গোস্বামীর বাড়ি বৈষ্ণব ধর্মের পীঠস্থান। সার্বভৌম তন্ত্র সাধনা করতেন। সেই কারণেই বড় গোস্বামী বাড়ির বাইরে তাঁর তন্ত্র সাধনার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। সেখানে পঞ্চমুণ্ডীর আসনে বসে তিনি তন্ত্রসাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। সেই সময় থেকেই এই পুজো জনপ্রিয়।

জনপ্রিয় এই পুজোর ভোগও। পুজোর দিন দুপুর থেকে বিশাল বিশাল কড়াইয়ে পোলাও রান্না হয়। রাত পর্যন্ত চলে সেই রান্না। পুজো শেষে শুরু হয় ভোগ বিতরণ। মাঝ রাত থেকে ভোগ সংগ্রহের জন্য প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন পড়ে। পুজো কমিটির সম্পাদক কাশীনাথ বলেন, ‘‘আগমেশ্বরীর ভক্তের সংখ্যা কয়েক লক্ষ। ভেজাল নিয়ে যা চলছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। তাই মানুষকে সচেতন করতে এমন সিদ্ধান্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE