Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাজি জিতে উড়ল ফানুস

উনিশ শতকে ইংরেজরা আসার পরে কলকাতা নানা রকমের আলো দেখেছিল। সেই আলো ছড়িয়েছিল বাণিজ্য নগরীগুলোতেও।

আকাশপথে: ফানুসে মজে গঞ্জ থেকে শহর। বৃহস্পতিবার নদিয়ার বেলপুকুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

আকাশপথে: ফানুসে মজে গঞ্জ থেকে শহর। বৃহস্পতিবার নদিয়ার বেলপুকুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩০
Share: Save:

হেমন্তে পিতৃপুরুষকে পথ দেখাতে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা বহু দিনের। ভাবা হয়, সেই আলো ধরেই কেউ আসেন বা চলে যান। তাই নিয়ে গান বাঁধা হয়েছে। জ্বালানো হয়েছে আলো। কখনও তা আকাশ ছেয়েছে। কখনও ঘরের কোণ।

উনিশ শতকে ইংরেজরা আসার পরে কলকাতা নানা রকমের আলো দেখেছিল। সেই আলো ছড়িয়েছিল বাণিজ্য নগরীগুলোতেও। শোনা যায়, পার্ক স্ট্রিটে আলোর উৎসব হত। তবে তা শীতের সময়। কিন্তু সেই উৎসবের আলো আগেই ধার করে নিয়ে বাঙালি বাবুরা তাঁদের নিজেদের সংস্কৃতিতে ব্যবহার করে। সেই সময় কলকাতায় এসেছিল উত্তর ভারতের প্রভাবও। স্বয়ং লখনউয়ের নবাব ওয়াজেদ আলি শাহই তখন কলকাতায়। মেটিয়াবুরুজে নিজের প্রাসাদে বসে তিনি এই শহর তথা বাংলাকে চেনাচ্ছেন অযোধ্যার রূপ। কেউ কেউ বলেন, সেই সময়েই কলকাতার মানুষ অবাক হয়ে দেখল, গঙ্গার ধার বরাবর রাতের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে আশ্চর্য আলো। সেই চলমান রঙিন মায়াময় আলো ভারী পছন্দ হল কলকাতার। জানা গেল, রেশমি কাপড়ের উপর আঠার আস্তরণ দিয়ে নীচে কর্পূরের প্রদীপ জ্বালিয়ে আকাশে উড়িয়েছেন নবাব।

তবে ফানুস সেই প্রথম কি না, তা নিয়ে তর্ক রয়েছে। কারও মতে, ফানুস ইংরেজরাই প্রথম ব্যবহার করেছিল। কারও মতে, ফানুস বাংলা চিনত সেই তুর্ক আমলের পর থেকেই। স্বাধীন নবাবরা যখন বাংলা শাসন করতেন, তখনও তাঁদের অন্দরমহলে ও সৈন্যশিবিরে এমনতর আলোর ব্যবহার ছিল।

উনিশ শতকেই উৎসব-পার্বণে ফানুস ওড়ানো ঘিরে কিন্তু ধনী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হল। কিন্তু দীপাবলির রাতে ফানুস ওড়ানো কবে থেকে শুরু হল, তার অবশ্য স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলে না। অমাবস্যার রাতে আকাশের বুক চিরে দুলতে দুলতে ভেসে যাওয়া রঙিন ফানুস যে কোনওদিন ‘আকবর বাদশার’ হাত থেকে ‘হরিপদ কেরানির’ নাগালে চলে আসবে, কে জানত! গত কয়েক বছরে দীপাবলির বাজার ছেয়ে গিয়েছে ফানুসে। কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর, করিমপুর থেকে কান্দি রাতের আকাশে উড়ছে শ’য়ে শ’য়ে ফানুস।

দাম মাত্র কুড়ি টাকা। আর তাতেই বেসামাল আতসবাজির বাজার। ফানুসের চাহিদা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, কালীপুজোর সকালেই বেলডাঙায় ফানুস ‘আউট অব মার্কেট’। আবার মেয়ের আবদারে নদিয়ার কাছারিপাড়ার শঙ্কর মণ্ডল বহরমপুর ছুটেছেন ফানুস কিনতে। নবদ্বীপ বা কৃষ্ণনগর বাজারেও ক্রেতারা আগে ফানুস কিনে তার পরে অন্য বাজি কিনছেন। বহরমপুর কল্পনা মোড়ের দিলীপ রজক বা বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার অমিত সিংহ জানান, গত বারের তুলনায় এ বার ফানুসের বিকিকিনি দ্বিগুণ বেড়েছে। ওঁদের কেউ এক হাজার কেউ আবার বারোশো ফানুস ইতিমধ্যেই বিক্রি করে ফেলেছেন।

নবদ্বীপের নন্দ রায়ের কথায়, ‘‘লোকে অন্য কোন বাজির দিকে তাকাচ্ছেই না। সকলেই ফানুস চাইছেন। এ বার প্রায় ছ’হাজার ফানুস এসেছে নবদ্বীপে। ফলে বাজির বিক্রি এ বার তলানিতে।’’ দিলীপ রজক বলছেন, ‘‘এক দিকে বাজির দাম বেড়েছে। অন্য দিকে, ফানুসের দাম কমেছে। তেমনি বাজি থেকে ছড়ানো দূষণ নিয়ে প্রচার, শব্দবাজি নিয়ে পুলিশের কড়াকড়ি সব মিলিয়ে লোকে নিরাপদ ফানুসের দিকেই ঝুকেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sky Lanterns Fireworks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE