Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামবাসীদের দেওয়া জমিতে সব্জি ফলিয়ে চলছে মিড ডে মিল

ছোট্ট ৪০০ বর্গফুটের বাগানের সব্জি দিয়ে ক’দিন আর চলে। তাই মিড ডে মিলের সব্জির জন্য ভরসা করতে হয় বাজারের উপরেই। সেই ভরসা কাটিয়ে সব্জি ফলনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাইছে রাজানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বাগান: স্কুলেই চাষ। নিজস্ব চিত্র

বাগান: স্কুলেই চাষ। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

ছোট্ট ৪০০ বর্গফুটের বাগানের সব্জি দিয়ে ক’দিন আর চলে। তাই মিড ডে মিলের সব্জির জন্য ভরসা করতে হয় বাজারের উপরেই। সেই ভরসা কাটিয়ে সব্জি ফলনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাইছে রাজানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে স্কুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন গ্রামবাসীরা। অসিত ও প্রদ্যোত দাস পাঁচ শতক জমি দিয়েছেন। সেখানে ফলছে সব্জি। মিড ডে মিলে রান্না হচ্ছে সেই সব্জি। আজ, শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই নতুন বাগানের সূচনা হবে। আসবেন সাংসদ থেকে সরকারি কর্তারা। ছাত্র ছাত্রীরা বাগানে একটি করে গাছ লাগাবে। তার জন্য ইতিমধ্যেই স্কুলে আনা হয়েছে শ’তিনেক পেঁপে, লঙ্কা, কুমড়ো, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়স, বেগুনের চারা। তারা। বাগানের নামকরণও করে ফেলেছে শিশুরা। নাম ‘রাজানগর পুষ্টি বাগান।’

স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অখিল দাস বলেন, ‘‘গ্রামে সম্পন্ন চাষিদের বাস। বাড়িতে লাগানো সব্জিই রান্না হয় ঘরে ঘরে। স্কুলেও এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ এ কাজে স্কুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’’

স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক অম্বুজা রাহা জানান, এই বাগানে থাকবে বেগুন, মুলো, পালং, টমাটো, পেঁপে, লাউ, বিন, কুমড়ো, ঢ্যাঁড়শ ইত্যাদি নানা জাতীয় সব্জি। সারা বছর এই বাগান থেকে স্কুলের জন্য মিলবে সব্জি। আম, জামরুল, পেয়ারা, লেবুর মতো নানা ফলের গাছও লাগানো হবে। এই সব সব্জি ও ফল ছাত্র- ছাত্রীদের মিড ডে মিলে দেওয়া হবে। স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১৬৭। এই বাগান চালু হলে গেলে বাইরে থেকে সব্জি কেনার দিন শেষ হয়ে যাবে।

কী ভাবে এল বাগান করার ভাবনা? মাস খানেক আগেই স্কুলের ‘প্রধানমন্ত্রী’ চতুর্থ শ্রেণির সুপর্ণ দাস প্রস্তাবটা দেয়। প্রার্থনার লাইনে দাঁড়িয়ে সে বলে, “স্যার বাগানটা একটু বাড়ালে হয় না। তাহলে আরও বেশি সব্জি মিলবে। মিড ডে মিলের সব্জিটা আর কিনতে হয় না।”

“হ্যাঁ, স্যার। আরও বড় বাগান হলে আমরা যত্ন করব। স্কুল শেষে জল দেব।” সম্মতি দেয় তৃতীয় শ্রেণির শিসা। কিন্তু বাগান করার জমি কই?

এরপরই গ্রামবাসীদের সভা ডেকে বাগান বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু জমি? সভা মাঝেই উঠে দাঁড়ান অসিত দাস। বলেন, “স্কুলের পাশেই আমার ৪ শতক জমি রয়েছে। স্কুলের জন্য বাগান হলে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে রাজি সেই জায়গা।” প্রদ্যোত দাসের প্রস্তাব, ‘‘পাশেই রয়েছে আমার এক শতক জমি। স্কুল চাইলে নিতে পারে সে জমিও।”

ব্যস, সমস্যার সমাধান। পরদিন থেকেই মাটি খুঁড়ে ‘পুষ্টি বাগান’ তৈরিতে নেমে পড়লেন গ্রামবাসীরা।

অসিতবাবু বলছেন, “সব্জি হলে আমাদের ছেলে মেয়েরাই তো পুষ্টি পাবে। তারাই যত্নআত্তি করবে। পরিবেশটাও ভাল থাকবে।”

উদ্যান পালন দফতরের জঙ্গিপুর মহকুমা আধিকারিক শুভদীপ নাথ বলেন, “প্রতিটি গ্রামের স্কুলেই এই ধরনের উদ্যোগ নিলে শিশুরা তাজা সব্জি পাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal School Vegetables Cultivation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE