Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ে রুখল ‘স্বয়ংসিদ্ধা’

এত দিন কন্যাশ্রীর মাধ্যমে যে চেষ্টা হচ্ছিল, ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্প চালু করে তা আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। যার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, নাবালিকাদের বিয়ে বা বিয়ের নাম করে নারী পাচার বন্ধ করা।

রাজি: শেষ পর্যন্ত বিয়ে বন্ধ রাখল পরিবার। নিজস্ব চিত্র

রাজি: শেষ পর্যন্ত বিয়ে বন্ধ রাখল পরিবার। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

এত দিন কন্যাশ্রীর মাধ্যমে যে চেষ্টা হচ্ছিল, ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্প চালু করে তা আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। যার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, নাবালিকাদের বিয়ে বা বিয়ের নাম করে নারী পাচার বন্ধ করা।

মঙ্গলবারই থানারপাড়ার টোপলা গ্রামে দুই নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হল। এ দিনই এক জনের বিয়ে ছিল, আর জনের ছিল পাকা কথা। সকাল থেকেই বিয়ের তোড়জোড় চলছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রেশমা খাতুনের বাড়িতে। স্বয়ংসিদ্ধা গোষ্ঠীর সদস্যেরা গিয়ে তার বাবা মিনারুল শেখকে বোঝান, নাবালিকার বিয়ে দেওয়া শুধু বিপজ্জনক নয়, বেআইনিও বটে। আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে তিনি ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের কাছে মুচলেকা দেন।

এর পরে পাত্র হাসিবুল শেখের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন সকলে। বেতাই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাসিবুল। তাঁর মা আলামতি বিবিকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিরস্ত করা হয়। ওই গ্রামেরই মেয়ে, নাজিরপুর সারদা বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নাসিমা খাতুনের বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা ছিল এ দিন। গোষ্ঠীর সদস্যেরা গিয়ে তার মা ফিরোজা বিবি ও বাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে বিয়ে আটকান। নাসিমাকে স্কুলে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয় তার পরিবার। রোজ টিফিনের সময়ে ওই স্কুলে বন্ধুদের মধ্যে প্রচার চালায় দশম শ্রেণির সুমিত্রা রায়, জেসমিনা খাতুন, নবম শ্রেণির দেবস্মিতা মণ্ডল, রেক্সোনা খাতুনেরা। তাদের মতো কয়েক জন ছাত্রী, এক পুলিশ অফিসার, মহিলা পুলিশকর্মী, এক শিক্ষিকা, অভিভাবক প্রতিনিধি ও পঞ্চায়েতের এক সদস্যকে নিয়ে গড়া হয়েছে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ কমিটি। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রদীপ্ত দাস বলেন, “বাল্যবিবাহের খবর ওই ছাত্রীরাই প্রথমে কমিটিকে জানাবে। তার পরে কমিটি ব্যবস্থা নেবে।”

গত দু’মাসে পুলিশের উদ্যোগে নদিয়া জেলা জুড়ে শ’খানেক স্কুলে এমন কমিটি গড়া হয়েছে। এর মধ্যে শান্তিপুরে সাতটি, ধুবুলিয়ায় পাঁচটি, নাকাশিপাড়ায় ছ’টি এবং কালীগঞ্জে ২০টি স্কুল রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই সবে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হয়েছে। এ বার সব স্কুলেই ‘স্বয়ংসিদ্ধা কমিটি’ গঠন করা হবে।

মুর্শিদাবাদে এমনিতে নারী পাচার-সহ নানা রকম অপরাধ অন্য অনেক জেলার চেয়ে বেশি। সাইবার ক্রাইম, বাল্যবিবাহ, নারী পাচার রুখতে জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই ‘আলোর পথে’ নামে একটি প্রকল্প চালাচ্ছে। পুলিশ সুপার থেকে নানা অফিসারেরা গিয়ে কথা বলেন। কন্যাশ্রী ইতিমধ্যেই ভাল সাড়া ফেলেছে। স্বয়ংসিদ্ধাও সফল হবে বলে কর্তারা আশাবাদী।

(সহ প্রতিবেদন: সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও সুজাউদ্দিন)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swayamsiddha marriage Minor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE