পুজোর আগে সে এক কাণ্ড ঘটত! আত্মীয়দের অনেকেই পুজোয় উপহার দিয়েছে। ছেলেটাও খুশি। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই এক গোঁ, ‘ও মা, তুমি কখন জামা কিনে দেবে?’
মায়ের কাছ থেকে কিছু না পাওয়া পর্যন্ত ছেলের পুজোর বাজার সাঙ্গ হত না। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে গিয়ে পোশাক কিনে দেওয়ার পরে স্বস্তি।
অবশ্য স্বস্তি বললে ভুল হবে। পোশাক হল তো বাজি দাও। বাজি হল তো হাতখরচা দাও। হাতখরচা হল তো ঠাকুর দেখাতে নিয়ে চলো। কপট রাগ দেখিয়ে ঝিমলি বলতেন, ‘‘বাপ রে বাপ, তুই পারিসও বটে!’’
সেই ছেলে, বছর চোদ্দোর দেবাশিস ভৌমিক ফেব্রুয়ারি মাসে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তিন দিন পরে পুকুরে পাওয়া গেল দেহ। পুলিশের দাবি, ১৫০ টাকার জন্য মদের ঠেকে বন্ধুরাই নাকি খুন করেছে কৃষ্ণনগরের নবম শ্রেণির পড়ুয়া, দেবাশিসকে।
আপন মনে বিড়বিড় করছেন ঝিমলি, ‘‘এমনটাও হয়!’’ আট বছর আগে স্বামী মারা গেলেন। ঝিমলির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তাও দাঁতে দাঁত চেপে তিনি সন্তানদের মানুষ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। চাকরি নেন একটি নার্সিংহোমে।
বাড়ির পাশে ফাঁকা জমিতে প্রতি বছর পুজো হয়। সেই মণ্ডপেই দিনভর পড়ে থাকত দেবাশিস। মাঠে বাঁশ পড়া থেকে শুরু করে প্রতিমা নিরঞ্জন, বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে কাটাত করত পুজোর ক’টা দিন। তাই মণ্ডপের গান, ঢাকের আওয়াজ কানে এলেই ঝিমলির চোখ দু’টো আরও বেশি জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে, দরজায় কেউ যেন কড়া নাড়ছে। খুব চেনা কায়দায়। মনে হচ্ছে, এই বুঝি ছেলেটা এসেই বাড়ি মাথায় করবে, ‘লাল শার্টটা কোথায় রেখেছ, মা? খুঁজে পাচ্ছি না। শিগ্গির এসো।’ অথচ এই কথাগুলো ঝিমলির বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে।
ফের দরজায় সেই কড়া নাড়ার চেনা আওয়াজ। মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ডুকরে ওঠেন মধ্য চল্লিশের ঝিমলি, ‘‘খোকা এলি নাকি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy