Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফোনে শাসানি, বাড়িতে আগুন

দু’টি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় জালনা দিয়ে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, ঘরের সামনে বিদ্যুতের তারও ফেলে রাখা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

দু’টি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় জালনা দিয়ে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, ঘরের সামনে বিদ্যুতের তারও ফেলে রাখা হয়েছিল।

শুক্রবার ধুবুলিয়া থানায় এমনই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর ভট্টাচার্য। পুলিশ তা সাধারণ ডায়েরি হিসেবেই নিয়েছে। যে দু’টি নম্বর থেকে ফোন আসছিল, সেগুলি কার তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এই ঘটনার পিছনে মহিলাঘটিত কোনও কারণ রয়েছে। যে নম্বর দু’টি থেকে ফোন আসছিল, সেগুলি আপাতত বন্ধ।

ধুবুলিয়ার ১৯ নম্বর এলাকায় সদ্য মা ও সদ্যবিধবা দিদিকে নিয়ে থাকেন বছর আটত্রিশের শঙ্কর। বছরখানেক আগে তাঁর দিদি শিপ্রার বিয়ে হয়েছিল করিমপুরে। গত নভেম্বরে হৃদ্‌রোগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে তিনি মা আর ভাইয়ের সঙ্গে‌ আছেন। শঙ্কর জানান, সম্প্রতি দু’টি ফোন নম্বর থেকে শিপ্রাকে উত্ত্যক্ত করা হচ্ছিল। শিপ্রা নম্বর বদলে ফেলেন। এর পরেই তাঁর ফোনে হুমকি দেওয়া শুরু হয়। যদিও পুলিশের কাছে অভিযোগে তা তিনি লেখেননি।

শঙ্কর জানিয়েছেন, পাশাপাশি দু’টি ঘরের একটিতে তিনি, অন্য ঘরে দিদি আর মা থাকেন। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ২টো নাগাদ পোড়া গন্ধে তাঁর ঘুম ভাঙে। উঠে দেখেন, ধোঁয়ায় ঘর ভরে গিয়েছে। দু’টি জানালা এবং ঘরের ভিতরে একটি চেয়ার জ্বলছে। দরজা খুলে বেরোতেই সামনে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে তাঁর পা ঠেকে। বাড়ির সামনে বিদ্যুতের লাইন থেকে হুকিং করে ওই তার ফেলে রাখা হয়েছিল। বারান্দার গ্রিলেও জড়ানো ছিল বিদ্যুতের তার। পায়ে ঠেকতেই ঝটকা খেয়ে শঙ্কর পড়ে যান। তাঁদের চিৎকারে পাড়ার লোকজন ছুটে এসে আগুন নেভান। গ্রিলের তার খোলেন। পরে পুলিশ গিয়ে হুক লাগানো তারটি নিয়ে এসেছে।

পুলিশের কাছে অভিযোগে দিদির কথা না লিখলেও শঙ্কর জানিয়েছেন, বাড়িতে রান্না করতে আসা মহিলার সঙ্গে তাঁর ‘সম্পর্ক’ আছে বলে ফোনে দাবি করা হত। সেই সঙ্গে নানা রকম গালিগালাজও চলত। ‘‘ফোনে বলা হত, রাঁধুনিকে আমি রক্ষিতা করে রেখেছি। তবে ওদের গুরুত্ব দিইনি বলেই তখন থানায় জানাইনি’’— বলেন শঙ্কর। তাঁর সন্দেহ, ফোন যারা করত, বাড়িতে আগুন লাগানো বা বিদ্যুতের তার ফেলা তাদেরই কাজ।

শিপ্রা অবশ্য মনে করছেন, তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে না পেরেই শঙ্করকে নিশানা করা হয়েছে। তিনি বাপের বাড়ি ফেরার পরে, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই এই উৎপাত শুরু হয়েছিল। শিপ্রা বলেন, “বিরক্ত হয়ে আমি মোবাইল নম্বর বদলে নিই। তার পরে ভাইকে ফোন করে নানা ভাবে হুমকি দিত।” শিপ্রাকে উত্ত্যক্ত করার কথা শঙ্কর অভিযোগপত্রে লেখেননি কেন? শঙ্করের বক্তব্য, “একে বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। বিদ্যুতের ঝটকাও খেয়েছি। ওই সময়ে অভিযোগপত্র গুছিয়ে লিখতে পারিনি। তাই দিদিকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করতে ভূলে গিয়েছি।” পুলিশ জানায়, দিনভর ফোন নম্বর দু’টি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সেগুলি কার, তা জানার চেষ্টা চলছে। ঘটনার পিছনে কী রহস্য রয়েছে, তাও জানার চেষ্টা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Threat House Burnt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE