Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জের, স্ত্রীর গায়ে আগুন দিল স্বামী

স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া লেগেই থাকত। শনিবারও সকাল থেকেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। এক সময় তরুণীর আর্তনাদ শুনে আর স্থির থাকতে পা়রেননি প্রতিবেশীরা। জোর করেই ঢুকে যান বাড়িতে।

থানায় তুষার বিশ্বাস ও তার বাবা-মা। — নিজস্ব চিত্র

থানায় তুষার বিশ্বাস ও তার বাবা-মা। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১২
Share: Save:

স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া লেগেই থাকত। শনিবারও সকাল থেকেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়। এক সময় তরুণীর আর্তনাদ শুনে আর স্থির থাকতে পা়রেননি প্রতিবেশীরা। জোর করেই ঢুকে যান বাড়িতে। আর তার পর দেখেন, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে তরুণীর গায়ে।

শনিবার নবদ্বীপ লাগোয়া উত্তর বাবলারির এই ঘটনায় খুনের চেষ্টার অভিযোগে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে তেরো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল নবদ্বীপ আদালত।

গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বর্ণালি বিশ্বাসকে প্রথমে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার রাতেই তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। গত কালই গ্রেফতার করা হয় বর্ণালির স্বামী তুষার বিশ্বাস, শ্বশুর সুখময় বিশ্বাস এবং শাশুড়ি মহিমাদেবীকে। তরুণীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ, ৩০৭, ৩২৬ ধারায় মামলা দায়ের করে। রবিবার ধৃতদের নবদ্বীপের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের তেরো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডি অ্যান্ড ট্রেনিং) মহম্মদ আজিম জানান, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, ওই মহিলার স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই ঘটনা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ধৃত তুষার বিশ্বাস পেশায় গাড়ির চালক। তার সঙ্গে দশ বছর আগে বিয়ে হয় বর্ধমানের কুলটির বাসিন্দা বর্ণালির। তাঁদের একটি মেয়েও আছে। ওই তরুণীর মাসতুতো ভাই অভিজিৎ দত্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই বর্ণালির উপর নানা ভাবে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তিনি বলেন, ‘‘বছর কয়েক ধরে তুষারবাবু এক কীর্তনিয়ার গাড়ি চালাচ্ছেন। সেই সুবাদে ওই মহিলার সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতাও হয়। এ সব নিয়ে ওদের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত।’’ এ সবের জেরে মেয়েকে ইদানীং বাপের বাড়িতে রেখে আসত বর্ণালি। শনিবারও সে মামার বাড়িতেই ছিল।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে নতুন শিক্ষকদের বদলি নিয়ে পার্থের দুই সুরে বিভ্রান্তি

অভিযোগ, কিছু দিন যাবৎ ওই কীর্তনিয়া নিয়মিত তুষারবাবুর বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। তাতে সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি ঘটছিল। জানা গিয়েছে, শনিবার সকালেও ওই কীর্তনগায়িকা তুষারবাবুর বাড়িতে আসেন। দীর্ঘক্ষণ ছিলেনও। বর্ণালির ভাইয়ের অভিযোগ, বোন প্রতিবাদ করতে স্বামী তাঁকে মারধর শুরু করে। তার পর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বর্ণালির আর্তনাদ শুনে পড়শিরা ছুটে গিয়ে দেখেন, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছটফট করছেন বর্ণালি। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রতিবেশিরাই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

তুষারের প্রতিবেশি, বাবলারি পঞ্চায়েতের সদস্য প্রশান্ত ঘোষের কথায়, “ওদের অশান্তির কথা গ্রামের সকলেই জানেন। এ দিন সকাল থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে এলাকার মানুষ যখন ওঁদের বাড়িতে যান, তখন কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি ওরা। তিনটের পরে বর্ণালির আর্তনাদ শুনে জোর করে সবাই যখন বাড়িতে ঢোকেন, তত ক্ষণে যা ঘটার, তা ঘটে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

torture Protest Burn Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE