Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নিজের ফাঁদে পা দিয়েই শ্রীঘরে যুবক

তদন্তে নেমে পুলিশ কাউসারের কথা জানতে পারে। কিন্তু কাউসার পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এ দিকে, ওই কিশোরী বাড়ি ফেরার পর থেকে কাউসার বিভিন্ন নম্বর থেকে ওই কিশোরীকে ফোন করছিল।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

তক্কে তক্কে ছিল কাউসার। সতর্ক ছিল পুলিশও।

কিন্তু শেষরক্ষা হল না! নিজেরই পাতা ফাঁদে আটকে গিয়ে এখন শ্রীঘরে ছেতিয়ানির বাসিন্দা কাউসার শেখ। শনিবার রাতে মুর্শিদাবাদ এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রবিবার তাকে বহরমপুর সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের
নির্দেশ দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মাস চারেক আগে বেলডাঙার এক নাবালিকার সঙ্গে ফোনে আলাপ হয় কাউসারের। সে তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। অভিযোগ, কাউসার এক দিন লালবাগে ডেকে পাঠায় ওই কিশোরীকে। কাউসারকে বিশ্বাস করে কিশোরী বাড়ি ছাড়ে। গত ২৭ জুলাই পুলিশ তাকে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের এক নিষিদ্ধপল্লিতে থেকে উদ্ধার করে।

তদন্তে নেমে পুলিশ কাউসারের কথা জানতে পারে। কিন্তু কাউসার পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এ দিকে, ওই কিশোরী বাড়ি ফেরার পর থেকে কাউসার বিভিন্ন নম্বর থেকে ওই কিশোরীকে ফোন করছিল। ওই কিশোরী জানায়, এ বারেও কাউসার নিজের ভুল স্বীকার করে বার বার বিয়ের কথা বলে। দিন কয়েক আগে কাউসার ফোন করে ওই কিশোরীকে শনিবার ফের হাজারদুয়ারির সামনে দাঁড়াতে বলে। সেখানেই সে বিয়ে করবে বলেও জানায়। ওই কিশোরীর পরিবার গোটা বিষয়টি স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও পুলিশকে জানায়।

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁরাও কাউসারের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। ফের কাউসার এমন একটা ফাঁদ পাতছে শুনে তাঁরাও দেরি করেননি। ওই কিশোরীকে বলা হয় নির্দিষ্ট দিনে, ঠিক সময়ে সে যেন হাজার দুয়ারির সামনে দাঁড়ায়। সেই মতো শনিবার বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ওই কিশোরী তার চাচা ও মাকে নিয়ে হাজারদুয়ারির সামনে অপেক্ষা করে। দূর থেকে সাদা পোশাকে নজর রাখছিল পুলিশও।

কাউসারের আসতে দেরি হওয়ায় পুলিশের কথা মতো ওই কিশোরী এক বার ফোনও করে। কাউসার জানায়, সে ট্রেনে আসছে। মিনিট দশেকের মধ্যেই সে চলে আসবে। কিছুক্ষণের মধ্যে কাউসার চলেও আসে। এসেই ওই কিশোরীর সঙ্গে নিচু গলায় কথা বলার সময় ওই কিশোরীর মা বলেন, ‘‘ভিজে ভিজে কথা বলার কী দরকার? তোমাদের তো আজই বিয়ে হচ্ছে। সেটা আগে হয়ে যাক। তার পরে যত খুশি কথা বোলো।’’

ওই তরুণীর মায়ের কথা মতো ওই কিশোরী ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কাউসার চলে আসে লালবাগেরই একটি বাড়িতে। পিছু নেয় সাদা পোশাকের পুলিশও। সেই বাড়িতে বিয়ের কথা শুরু হতেই আচমকা দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে দু’জন পুলিশকর্মী। তাঁরা কাউসারকে টানতে টানতে নিয়ে যান। সাদা পোশাকে থাকায় কাউসার প্রথমে চিৎকার করে, ‘‘আমি বিয়ে করতে এসেছি। আমাকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন?’’ ওই দুই পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘আগে থানায় চল। সেখানেই যা বলার বলব।’’ ততক্ষণে কাউসারও বুঝে যায়, সে ফাঁদে পড়ে গিয়েছে।

বছর সতেরোর ওই নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, মাস চারেক আগে মেয়ে স্কুলে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। বাড়ির লোকজন বেলডাঙা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে কাউসারের কথা জানতে পারে। নিষিদ্ধপল্লি থেকে কিশোরী কোনও ভাবে বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানায়। তার পর পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, বেলডাঙা থানা এলাকার বাসিন্দা কাউসার শেখ ও নবাব শেখ দু’জনে মিলে ওই নাবালিকাকে নিষিদ্ধপল্লিতে পাচার করেছিল। নবাবকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমানে সে জেল হাজতে। কাউসারকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। এ দিন সে ফের ফাঁদ পাতছে জানতে পেরে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এ বারেও কাউসারের বিয়ের নাম করে মেয়েটিকে ডেকে এনে ফের পাচার করে দিত।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী ফেরদৌসি বেগম বলেন, ‘‘ভাগ্যিস মেয়েটি আমার কাছে এসে গোটা বিষয়টি জানিয়েছিল। না হলে আবার একটা বড় বিপদ ঘটত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

women trafficking Youth Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE