Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অমরনাথের পথে যাত্রা শেষ

পথ তাঁকে টানত ছোট থেকে। পাগলের মতো বেড়াতে ভালোবাসতেন তিনি। বরফ ঢাকা পাহাড়ের প্রতি তাঁর প্রেম ছিল চিরকালীন। এগারো হাজার ফুট উচ্চতার এক বরফ ঢাকা পথেই যাত্রা শেষ হল গোপালচন্দ্র দাসের (৬২)। নবদ্বীপের পরিচিত কাঁসা পিতল ব্যবসায়ী গোপালবাবু সস্ত্রীক গত ২ জুলাই বুধবার যাত্রা করেছিলেন তুষারতীর্থ অমরনাথের উদ্দেশে। কিন্তু যাত্রা শুরুর সাত দিনের মাথায় ৮ জুলাই, মঙ্গলবার অমরনাথে ওঠার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ গোপালবাবুর ছেলেকে বিএসএফের লোকেরা ফোন করে মৃত্যু সংবাদ দেয়।

গোপালচন্দ্র দাস। —নিজস্ব চিত্র।

গোপালচন্দ্র দাস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০০:২৪
Share: Save:

পথ তাঁকে টানত ছোট থেকে। পাগলের মতো বেড়াতে ভালোবাসতেন তিনি। বরফ ঢাকা পাহাড়ের প্রতি তাঁর প্রেম ছিল চিরকালীন। এগারো হাজার ফুট উচ্চতার এক বরফ ঢাকা পথেই যাত্রা শেষ হল গোপালচন্দ্র দাসের (৬২)। নবদ্বীপের পরিচিত কাঁসা পিতল ব্যবসায়ী গোপালবাবু সস্ত্রীক গত ২ জুলাই বুধবার যাত্রা করেছিলেন তুষারতীর্থ অমরনাথের উদ্দেশে। কিন্তু যাত্রা শুরুর সাত দিনের মাথায় ৮ জুলাই, মঙ্গলবার অমরনাথে ওঠার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ গোপালবাবুর ছেলেকে বিএসএফের লোকেরা ফোন করে মৃত্যু সংবাদ দেয়।

জানা গিয়েছে মঙ্গলবার সকালে চন্দনবাড়ি থেকে গোপালবাবু এবং তার স্ত্রী কানন দাস ডুলিতে চড়ে অমরনাথ মন্দিরের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পথেই তাঁর মৃত্যু হলে দেহ নামিয়ে নিয়ে আসা হয় চন্দনবাড়ি বিএসএফ ক্যাম্পে। এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও পারিবারিক সূত্রে খবর, গোপালবাবুর উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল। যা পাহাড়ের ওই উচ্চতায় মৃত্যু ডেকে এনেছিল।

মঙ্গলবার রাতে গোপালবাবুর মৃত্যুর খবর বাড়ি এসে পৌঁছতেই দিশাহারা হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন গোপালবাবুর বিবাহিত মেয়েরা। বুধবার সকালে ঢপওয়ালির মোড়ে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিন মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে ঘটনার আকস্মিকতার জের কাটিয়ে উঠতে পারেননি এখনও।

একমাত্র ছেলে চন্দন দাস জানান, ২ জুলাই দুপুরে নবদ্বীপের বাড়ি থেকে তাঁর বাবা-মা এবং নবদ্বীপের আর জনা কুড়ির একটি দল রওনা দেয়। ওই দিন বিকেলে বর্ধমান থেকে তাঁরা জম্মু তাওয়াই এক্সপ্রেস ধরে জম্মু পৌঁছন শুক্রবার। চন্দন বলেন, “বাবা-মা অমরনাথ যাত্রার আগে জম্মু থেকে বৈষ্ণোদেবী গিয়েছিলেন। বাড়িতে ফোন করে বাবা জানিয়েছিলেন, বৈষ্ণোদেবীতে ওঁরা ঘোড়ায় চড়ে উঠেছিলেন। শরীর ভালই আছে।” সেখান থেকে দলটি রবিবার পৌঁছয় শ্রীনগরে। সোমবারে চন্দনবাড়ি পৌঁছে মঙ্গলবার ভোর থেকে অমরনাথের মূল পথে যাত্রা শুরু হয়। চন্দন বলেন, “সোমবার রাতে ফোন করে বাবা বলল সব ঠিক আছে। আমি তখনও বলেছিলাম, তেমন বুঝলে ফিরে এসো। অমরনাথ যেতে হবে না। বাবা চিন্তা করতে বারণ করলেন। তারপর কোথা থেকে কী হল কিছুই বুঝতে পারছি না। মা কিছু বলতে পারছেন না। দলের বাকিরা কোথায় গেলেন জানি না। ভাষার সমস্যাও হচ্ছে।”

নবদ্বীপের বাসিন্দা পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত সঞ্জয় ভৌমিক জানান, চন্দনবাড়ি প্রায় ১১ হাজার ফুটের ওপরে। সেখান থেকে ওঁরা আরও উপরের দিকে উঠছিলেন। এই উচ্চতায় এমনিতেই অক্সিজেন সমতলের থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায়। আবার উচ্চতার বাড়তে থেকে রক্তচাপ। যেহেতু দু’টি সমস্যা আগে থেকেই ছিল গোপালবাবুর, সেক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। বড় মেয়ে শুক্লা দাস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমরা সবাই অত উঁচুতে এই বয়সে যেতে বারণ করেছিলাম। উত্তরে বাবা বলেছিল চারিদিকে শুধু বরফ। আবার বরফ দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ। এ জিনিস নাকি না দেখলে নয়। আর এখন বাবা নিজেই বরফ চাপা হয়ে কফিনে ফিরছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gopal das nabadwip amarnath
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE