সরিফা খাতুন।—নিজস্ব চিত্র।
‘একটা আলোর ফুলকি আর শব্দ। তারপরই আমার গলা ছেড়ে মাটিতে পড়ে গেল মা। আর উঠল না।’ বুধবার সকালে প্রতিবেশীর দাওয়ায় বসে এই ভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিল নিহত মোসে বেওয়ার ছোট মেয়ে সরিফা খাতুন। মঙ্গলবার রাতে ঘটনার পর থেকে একটানা কেঁদে-কেঁদে চোখের কোল ফুলিয়ে ফেলেছে সে। এখন শুকিয়ে এসেছে চোখের জলও।
মালঞ্চ হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সরিফা জানায়, সাত বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তার বাবা জহির আলি মণ্ডল। তিনি ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন। তাঁর চিকিৎসার খরচে নিঃস্ব হয়ে যায় গোটা পরিবার। স্বামীর মৃত্যুর পরে এক প্রকার ভিক্ষা করেই ছেলেমেয়েকে বড় করেছিলেন মোসে বেওয়া। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সংসারের অভাব ঘোচাতে বছর ষোলোর ছেলে সোলেমান কেরলে পাড়ি দিয়েছে মাস তিনেক আগে। সবে সুখের দিন ফিরছিল সংসারে।
অন্য দিনের মতো মঙ্গলবার রাতে টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখতে ছোট মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেশী আত্মীয় গাজি রহমান মণ্ডলের বাড়ি গিয়েছিলেন মোসে বেওয়া। পরপর দু’টো সিরিয়াল দেখে বাইরে বেরিয়ে পাকা রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ান। তখনই আচমকা গুলি এসে লাগে তাঁর মাথায়। সঙ্গে-সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সরিফার চিৎকার শুনে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন।
বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়ার পরও রাস্তার উপরে নর্দমার পাশে স্পষ্ট জেগে আছে রক্তের দাগ। ইটের রাস্তা মিশেছে যে মালঞ্চ স্ট্রিটে, সেই রাস্তার গায়েই গাজি রহমানের বাড়ি। পাকা রাস্তার উল্টো দিকে বিরাট খেলার মাঠ। উল্টো দিকে সেই মাঠের এক কোণেই নাকি জটলা করে দাঁড়িয়ে ছিল চার-পাচ জন যুবক। রাস্তার দু’দিকে পথবাতি। কিন্তু কোনওটাতে আলো জ্বলে না। সরিফা বলে, ‘‘রাস্তার উল্টোদিকে কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে জটলা করছিল। তাদের ভিতর থেকে গুলিটা ছিটকে আসে।”
ঘটনার কিছু আগেই স্থানীয় দুষ্কৃতীদলের কয়েকজনকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ঘুরতে দেখেছেন এলাকার মানুষ। কিন্তু ভয়ে তারা কিছু বলতে পারেননি। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে অবশ্য ভয়ে বাড়িতে বসে থাকেননি কেউ। বুধবার স্থানীয় পাঁচ দুষ্কৃতীর বাড়ি ভেঙে ভয়কে গুঁড়িয়ে দিলেন এলাকাবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy