Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কর্মী খুনে সামনে কোন্দল, গাংনাপুরে অস্বস্তিতে তৃণমূল

লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মী তাপস মজুমদার খুনের ঘটনায় গাংনাপুরের দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের দলের উপপ্রধান অরুণ শিকদারের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ল তৃণমূল।

নিঞ্জস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪১
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মী তাপস মজুমদার খুনের ঘটনায় গাংনাপুরের দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের দলের উপপ্রধান অরুণ শিকদারের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ল তৃণমূল।

বুধবার রাতে গাংনাপুর রেল স্টেশনের কাছে দেবগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি অমিত বসুর বাড়ির উঠোনে বছর আটত্রিশের তাপসবাবুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালায় আততায়ীরা। বৃহস্পতিবার গাংনাপুর থানায় চার জন দুষ্কৃতীর নামে খুনের অভিযোগ করেন তাপসবাবুর স্ত্রী পিঙ্কিদেবী। পাশাপাশি স্থানীয় তৃণমূল উপপ্রধান অরুণ শিকদার এই খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন পিঙ্কিদেবী। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘অরুণ শিকদার খুন করতে পারে বলে ঘনিষ্ঠদের বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলেন’ তাঁর স্বামী।

স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “আমাদের দলে কোন্দল নেই। তবে, আইন আইনের পথেই চলবে। পুলিশ তদন্ত করুক। দোষীকে খুঁজে বার করে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।” নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দেবগ্রাম অঞ্চলের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে তা নিয়ে বিধায়ক আবিররঞ্জন বিশ্বাস ও রানাঘাট ২ নম্বর ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক সমীর পোদ্দারের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে অনেক দিন ধরেই। শেষমেশ সেই লড়াইয়ে এগিয়ে যান সমীর পোদ্দার। তাঁর অনুগামী অমিত বসু অঞ্চল সভাপতি হন। পিছু হটতে হয় আবিরবাবুর অনুগামী দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান অজয় রায়কে। সভাপতি নির্বাচন-পর্ব বেশ কয়েক মাস আগে মিটে গেলেও, চোরাস্রোত ছিলই। দুই গোষ্ঠীর অনুগামীদের মধ্যে গণ্ডগাল লেগেই থাকত। অমিতবাবু জানান, বুধবার সন্ধে থেকে তাপসবাবু তাঁরই সঙ্গে ছিলেন। স্থানীয় একটি সমস্যা নিয়ে দু’জনে থানায় যান। পরে দলীয় কার্যালয়ে এসে বসেন। রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য অমিতবাবুর উঠোনে রাখা মোটর বাইকটি আনতে গিয়েছিলেন তাপসবাবু। সেই সময় তাঁকে গুলি করে পালায় আততায়ীরা। অমিতবাবু বলেন, “আমি তখন দলীয় কার্যালয়েই বসে। গুলির আওয়াজ পেলেও ওটা যে আমার বাড়িতেই হয়েছে ভাবতে পারিনি। পরে খবর পেয়ে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তাপস।”

ভোটের আগে এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সিপিএমের দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন। উপপ্রধান অরুণ শিকদার স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আবিররঞ্জন বিশ্বাসের ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত। অন্য দিকে, তৃণমূল বিধায়ক সমীর পোদ্দারের কাছের লোক নিহত তাপসবাবু। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পবিত্র সমাদ্দার বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের কারণে ওই খুন হয়েছে। এখন মৃতের স্ত্রী-ও একই কথা বলছেন।”

তবে দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরুণ শিকদার বলেন, “আমার নামে পুলিশে এই রকম অভিযোগ হল কী ভাবে বুঝতে পারছি না। ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি এলাকাতেও ছিলাম না। সন্ধ্যা ছটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত স্থানীয় বিধায়কের (আবির বিশ্বাস) সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় দলীয় সভা করেছি।” অঞ্চল সভাপতি অজয় রায়ের সঙ্গে কোনও বিরোধ ছিল বলেও মানতে চাননি অরুণবাবু। তৃণমূল বিধায়ক সমীর পোদ্দারের বক্তব্য, “অরুণ শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগটা মৃতের স্ত্রী করেছেন। এই ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই।” রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তাপস মণ্ডল অবশ্য ভোটের বাক্সে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না। তিনি বলেন, “এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিষয়টি পুলিশ দেখছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ranaghat tmc gangnapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE