Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলমের ডগায় মাইক্রোফোন, ধৃত দুই পরীক্ষার্থী

শেষ রক্ষা হল না! তার আগেই সেনাবাহিনীর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল দু’জন পরীক্ষার্থী। রবিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘ট্রেড ম্যান’ পদে পরীক্ষা দিতে বহরমপুরে আসেন বীরভূমের ভাগ্যবতীপুরের সত্যজিৎ ঘোষ এবং মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের আহমেদ শরিফ। কিন্তু পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে পরীক্ষার্থীদের শরীরে তল্লাশি চালানোর সময়ে ওই দু’জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মিলেছে মোবাইল, ব্লু-টুথ, কলমের ডগায় লুকোনো মাইক্রোফোন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৫০
Share: Save:

শেষ রক্ষা হল না! তার আগেই সেনাবাহিনীর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল দু’জন পরীক্ষার্থী। রবিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘ট্রেড ম্যান’ পদে পরীক্ষা দিতে বহরমপুরে আসেন বীরভূমের ভাগ্যবতীপুরের সত্যজিৎ ঘোষ এবং মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের আহমেদ শরিফ। কিন্তু পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে পরীক্ষার্থীদের শরীরে তল্লাশি চালানোর সময়ে ওই দু’জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মিলেছে মোবাইল, ব্লু-টুথ, কলমের ডগায় লুকোনো মাইক্রোফোন।

সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়নি। মোবাইল, ব্লু-টুথ, কলমের ডগায় লুকোনো মাইক্রোফোন বাজেয়াপ্ত করে ছেড়ে দিয়েছে। বহরমপুরের আর্মি রিক্রুটিং কার্যালয়ের অধিকর্তা কর্নেল অনিল পণ্ডিত বলেন, “পরীক্ষা হলে ঢোকার আগে পরীক্ষার্থীদের শরীর তল্লাশির সময়ে ওই দু’জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল, ব্লু-টুথ, কলমের ডগায় লুকোনো মাইক্রোফোন মিলেছে। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে তারা নকল করার উদ্দেশ্যে এসেছিল বলে জেরায় তারা স্বীকারও করেছে।”

পুলিশে না দেওয়ার কারণ কী?

সেনাবাহিনীর ওই কর্তা বলেন, “পরীক্ষা চলাকালীন ওই প্রযুক্তির সাহায্যে নকল করলে তখন অপরাধ প্রমাণিত হত। সেক্ষেত্রে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হত। কিন্তু পরীক্ষার হলে ঢোকার আগেই তারা হাতেনাতে ধরা পড়ে যায়। এই অবস্থায় তাদের পরীক্ষায় বসতে না দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

বহরমপুরের ওই সেনাবাহিনী কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য রবিবার লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করে বহরমপুরের আর্মি রিক্রুটিং অফিস। ‘সোলজার’-এর বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য সর্বভারতীয় স্তরে রবিবার ওই পরীক্ষা ছিল। যে সমস্ত পদের জন্য পরীক্ষা হয়, সেগুলি হল--সোলজার জেনারেল ডিউটি, নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, টেকনিক্যাল, ক্লার্ক ও ট্রেড ম্যান।

বহরমপুর আর্মি রিক্রুটিং কার্যালয়ের অধীনে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান ও নদিয়া জেলা। ওই চার জেলার ৫৫০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উপস্থিত হন। ওই দু’জন পরীক্ষার্থী ট্রেড ম্যান পদের জন্য আবেদন করেন। কলেজের মূল গেটের সামনে পরীক্ষার্থীদের শরীরে তল্লাশি চালিয়ে তাদের পরীক্ষার হলে ঢোকানো হচ্ছিল। সেই সময়েই মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের আহমেদ শরিফের শরীরে হাত দিয়ে তল্লাশির চালানোর সময়ে গেঞ্জির নিচের দিকে সেলাই করে ঢোকানো ব্লু-টুথে হাত পড়ে যায় সেনাবাহিনীর পুলিশের। এর পরে তাকে জামা খুলতে বলা হয়। জামা খোলার পরেই ব্লু-টুথের সন্ধান মেলে। তখনই তাকে নিয়ে যাওয়ায় কলেজের একটি ঘরে। সেখানে ভাল করে তল্লাশি চালানো হয়। তখনই একটি মোবাইল এবং একটি কলম উদ্ধার হয়। অনিলবাবু বলেন, “ওই কলমটি কিন্তু অদ্ভূত ধরণের। শিস্-এর বদলে কলমের ডগায় রয়েছে মাইক্রোফোন।”

আহমেদ শরিফ ধরা পড়ার পরে কড়া ভাবে তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনীর পুলিশ। বীরভূমের সত্যজিৎ ঘোষ অবশ্য বিষয়টি তখনও জানতে পারেনি। ফলে তল্লাশি চালানোর সময়ে ধরা পড়ে যায় সত্যজিৎ। সেনাবাহিনীর কর্তারা তাদের এক সঙ্গে জেরা করে জানতে পারেনএক জনই দালাল সত্যজিতের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা এবং শরিফের কাছে থেকে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। তারা ওই টাকা দিতে রাজিও হয়। এর পরেই সেলাই করে ব্লু-টুথ আঁটা গেঞ্জি ও অত্যাধুনিক কলম ওই দালাল সরবরাহ করে। অনিলবাবু বলেন, “পরীক্ষার্থী দু’জনেরই পরনে ছিল একই রঙের গেঞ্জি। ফলে জেরায় ওই পরীক্ষার্থী দুজন সত্যি কথা বলেছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে ওই দালাল সম্বন্ধে তারা বিস্তারিত কিছু জানে না বলে আমাদের জানিয়েছে। গোটা বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE