Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কালু ঘরে ফিরতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পুলিশ

শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দেওয়াটাই বাকি ছিল! থানা-পুলিশ-সালিশি-আইনজীবীর পরামর্শ কিছুই বাদ রাখেননি নিমতিতার রেলগেটপাড়ার বাসিন্দা প্রবীরকুমার দাস। শেষতক ঘরের প্রাণী ঘরে ফেরায় হাসছেন প্রবীরবাবু, “এত দৌড়ঝাঁপ করে কালুকে যে ফিরে পেলাম, সেটাই সবথেকে বড় কথা। বাপরে বাপ, যা গেল এ ক’দিন!” আর কালু? দিনকয়েকের ‘অ্যাডভেঞ্চার’ সেরে বাড়ি ফিরে পঞ্চ পাণ্ডবের পঞ্চুর কায়দায় লেজ নাড়ছে।

পোষ্যের সঙ্গে প্রবীরবাবু।

পোষ্যের সঙ্গে প্রবীরবাবু।

বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দেওয়াটাই বাকি ছিল!

থানা-পুলিশ-সালিশি-আইনজীবীর পরামর্শ কিছুই বাদ রাখেননি নিমতিতার রেলগেটপাড়ার বাসিন্দা প্রবীরকুমার দাস। শেষতক ঘরের প্রাণী ঘরে ফেরায় হাসছেন প্রবীরবাবু, “এত দৌড়ঝাঁপ করে কালুকে যে ফিরে পেলাম, সেটাই সবথেকে বড় কথা। বাপরে বাপ, যা গেল এ ক’দিন!” আর কালু? দিনকয়েকের ‘অ্যাডভেঞ্চার’ সেরে বাড়ি ফিরে পঞ্চ পাণ্ডবের পঞ্চুর কায়দায় লেজ নাড়ছে। আর চেনা আস্তানায় ঘুরঘুর করতে করতে মাঝেমধ্যেই আড়মোড়া ভেঙে ডেকে উঠছে—ভৌ...।

বছর খানেক আগে জামালপুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে কুচকুচে কালো রঙের নেড়িটা মনে ধরেছিল প্রবীরবাবুর। বাড়িতে নিয়ে এসে গায়ের রং দেখে তিনি নামও রেখেছিলেন--কালু। তারপর থেকে কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে আর কালুকে নিয়েই দিব্যি দিন কাটছিল বিপত্নীক প্রবীরবাবুর। অঘটনটা ঘটল ২৭ অগস্ট। রোজ দিনের মতো রাত ন’টা নাগাদ কালুকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তারপর এক দোকানে কালুকে রেখে তিনি গিয়েছিলেন অরঙ্গাবাদে। ঘণ্টাখানেক পরে ফিরে এসে তিনি দেখেন কালু সেখানে নেই। পাঁচ দিন ধরে নানা জায়গায় খোঁজ করে কালুর কোনও সন্ধান না পেয়ে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন।

সেখানে গিয়ে আর এক কাণ্ড! কালু নিখোঁজ শুনেই থানার ডিউটি অফিসার প্রবীরবাবুকে ছুড়ে দেন একের পর এক প্রশ্নবাণ— বয়স কত? কবে থেকে নিখোঁজ? কোনও শত্রু আছে কিনা? প্রবীরবাবু বলছেন, “কালু যে কুকুর সে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই পুলিশ নাগাড়ে প্রশ্ন করে যায়। পরে যেই বলেছি কালু আসলে কুকুর তখন তো ওই অফিসার খুবই রেগে গিয়েছিলেন।” ওই পুলিশ আধিকারিক বলছেন, “বিশ্ব সংসারে রোজ জলজ্যান্ত কত মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। আর সাতসকালে একটা নেড়ির নিখোঁজ ডায়েরি করতে হবে শুনলে কার না রাগ হয় বলুন তো?” কিন্তু প্রবীরবাবুও ছাড়ার পাত্র নন। কালুকে নিয়ে ছোটখাটো একটা বক্তৃতা দিয়ে তিনি ডায়েরি (জিডি নম্বর ৫১৬, তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪) করে তবেই বাড়ি ফিরেছিলেন।

এ দিকে পুলিশের ভূমিকা মোটেই ভাল ঠেকছিল না প্রবীরবাবুর। ডায়েরি করার পরেও নানা লোকজনকে দিয়ে থানায় ফোন করিয়েও কালুর খোঁজ যখন মিলল না তখন আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে এক আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তিনি। তবে তার আগেই খোঁজ মিলল কালুর। পাশের গ্রামের শিবেন্দু গোস্বামীর বাড়িতে কালুকে দেখে তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন প্রবীরবাবু। কিন্তু বেঁকে বসলেন পেশায় গ্রন্থাগারিক শিবেন্দুবাবু, “এ কুকুর যে আপনার তার প্রমাণ কী?”

প্রবীরবাবুও দমবার পাত্র নন। বিষয়টি স্থানীয় জগতাই ১ গ্রাম পঞ্চায়েত ও ফের পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশ কুকুর-সহ দু’পক্ষকেই বুধবার সন্ধ্যায় থানায় ডেকে পাঠায়। কিন্তু এই নিয়ে আর থানা-পুলিশের ‘ঝামেলায়’ যেতে চাননি শিবেন্দুবাবু। সন্ধ্যার আগেই শিবেন্দুবাবু প্রবীরবাবুকে বাড়িতে ডাকেন। সেখানে ‘আমরা আমাদের কুকুর বুঝিয়া পাইলাম’ লিখে সই করে কালুকে প্রবীরবাবুর হাতে তুলে দেন শিবেন্দুবাবু।

ওই গ্রন্থাগারিক বলছেন, “আমার বাড়িতেও দিশি-বিলিতি মিলিয়ে তিনটে কুকুর রয়েছে। এই কুকুরটাকে জখম অবস্থায় রাস্তায় কাতরাতে দেখে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। এই ক’দিনে ও মেয়েরও খুব প্রিয় হয়ে গিয়েছিল। আসলে আরও কয়েকজন এই কুকুরটা তাঁদের বলে দাবি করেছিলেন বলেই আমি প্রমাণ দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রবীরবাবু কুকুরটার জন্য মরিয়া হয়ে যে ভাবে ঘুরছিলেন তাতেই বুঝতে পারি এ কুকুর ওঁরই।”

কালু বাড়ি ফিরতে হাঁফ ছেড়ে বেচেঁছে পুলিশও। সুতি থানার ওসি সম্রাট ফণি বলছেন, “ভাগ্য ভাল কুকুর-কেস আদালত পর্যন্ত গড়ায়নি। সেখানে গেলে কপালে আরও কী কী দুর্ভোগ ছিল কে জানে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalu pet dog missing biman hazra suti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE