চিত্তরঞ্জনের শয্যায় নিত্যানন্দ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহরমপুরে একই পরিবারের তিন মহিলা খুনের ঘটনায় ধৃত নিত্যানন্দ দাস। অভিযোগ, পুলিশের অকথ্য অত্যাচারে হাসপাতালে যেতে হয়েছে তাকে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তাদের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল নিত্যানন্দ। সেই সময়ই চোট পেয়েছে সে। চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগীর আঘাত গুরুতর। একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হবে।
২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি বহরমপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু ও বিজয়াদেবীর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই খুনের ঘটনার সাত দিন পরে শিলিগুড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয় নিত্যানন্দ দাসকে। তার পর থেকে নিত্যানন্দ বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি হিসেবে রয়েছে।
ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ২০০৭ সালের ২৮ অগস্ট নিত্যানন্দ দাস শান্তিপুর থানার বাবলা-গোবিন্দপুরে তাঁর এক মাসির বাড়িতে গিয়ে খাবারের সঙ্গে মাদক জাতীয় কিছু মিশিয়ে প্রায় ১০ ভরি সোনার অলঙ্কার চুরি করেছিল। ওই মহিলা পরে শান্তিপুর থানায় নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেন। তৎকালীন শান্তিপুর থানার ওসি অনুপম চক্রবর্তী বলেন, “মাদক খাইয়ে বেহুঁশ করে চুরির অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৮ ও ৩৭৯ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছিল নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে। কিন্তু তখন তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।” নিত্যানন্দকে ‘ফেরার’ দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছিল শান্তিপুর থানার পুলিশ।
বহরমপুরের ওই খুনের ঘটনায় ধরা পড়ার পরে নিত্যানন্দকে নাগালে পায় শান্তিপুর থানার পুলিশ। পুরনো মামলায় নিত্যানন্দকে হাজির করানোর জন্য ‘প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু’ করে রানাঘাট এসিজেএম আদালত। সেই মতো গত ১৬ জুলাই তাকে বহরমপুর থেকে রানাঘাট নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “রানাঘাট এসিজেএম আদালত থেকে বহরমপুরে নিয়ে আসার পথে নিত্যানন্দ পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময়ে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। ধরতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। এতে আঘাত লাগতেও পারে। গোটা বিষয়টি রানাঘাট এসিজেএম আদালতকে জানানো হয়েছে।”
জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬ জুলাই গভীর রাতে বহরমপুর থানার পুলিশ তাকে বহরমপুর সংশোধনাগারে ফেরত দিয়ে যায়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নিত্যানন্দকে ১৮ জুলাই বিকেলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসক জয়দীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ভর্তির সময়ে অর্ধ-অচৈতন্য অবস্থায় ছিল রোগী। স্যালাইন দেওয়ার পরেও রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়নি। রোগী কথাও বলতে পারত না। কোন উপসর্গ নিয়ে তাকে ভর্তি করানো হয়েছে তার কোনও স্পষ্ট ধারণা জেল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।” ঘটনার সময়ে মানতাদেবী ব্যক্তিগত কাজে মুম্বইয়ে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, কিন্তু পুলিশ বা জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে এক জন অভিযুক্ত ফোন করে বিষয়টি আমাকে জানায়। ওই খবর পেয়ে ২৬ জুলাই হাওড়া স্টেশনে নেমে খোঁজখবর করি। কিন্তু পুলিশ আমাকে কিছু জানাতে রাজি হয়নি।”
মানতাদেবীর আরও অভিযোগ, ২৭ জুলাই বহরমপুরে পৌঁছে থানায় গেলে আমাকে ৪-৫ ঘণ্টা বসিয়ে রেখে কোনও সাহায্য করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় ওরা। অনেক কষ্টে জানতে পারি, চিত্তরঞ্জন মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগীর দেহে একাধিক জায়গায় চোট রয়েছে। একাধিক অস্ত্রোপচার হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy