Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গরম উপেক্ষা করেই ভোট উৎসব

কয়েকটি ভোটগ্রহণ যন্ত্র বিকল ও বিক্ষিপ্ত কিছু অঘটন ছাড়া দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ পর্ব শান্তিতেই হল জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যেও ভোট দেওয়ার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। মুর্শিদাবাদে ৮৭ শতাংশ ও জঙ্গিপুরে ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে এ বার। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। টুকরো গণ্ডগোল ছাড়া বড় ধরণের কোনও ঘটনার খবর নেই।

লালবাগে ভোটের লাইনে।

লালবাগে ভোটের লাইনে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৭
Share: Save:

কয়েকটি ভোটগ্রহণ যন্ত্র বিকল ও বিক্ষিপ্ত কিছু অঘটন ছাড়া দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ পর্ব শান্তিতেই হল জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যেও ভোট দেওয়ার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। মুর্শিদাবাদে ৮৭ শতাংশ ও জঙ্গিপুরে ৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে এ বার।

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। টুকরো গণ্ডগোল ছাড়া বড় ধরণের কোনও ঘটনার খবর নেই। বেশ কয়েকটি বুথে ইভিএম গণ্ডগোলের অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করেছে। সেখানে নতুন ইভিএম দিয়ে ফের ভোটগ্রহণ হয়। দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের কোনও বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন জানায়নি।”

ইভিএম খারাপ নিয়ে অবশ্য বিস্তর ভুগতে হয়েছে জেলাবাসীকে। সকাল ৭টায় রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভার ১১৪ নম্বর বুথে ইভিএম পরীক্ষার সময় ধরা পড়ে ২ নম্বরে বোতাম টিপলে ভোট চলে যাচ্ছে ১ নম্বর প্রার্থীর পক্ষে। সেটা ধরা পড়তেই সামান্য গোলমাল হয়। পরে নতুন ইভিএম নিয়ে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জঙ্গিপুর বিধানসভারই ১৫২ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ থাকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। ওই বিধানসভারই বাজারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭৫ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ থাকায় আধ ঘণ্টা পরে ভোট শুরু হয়। রঘুনাথগঞ্জ শহরের ম্যাকেঞ্জি পার্ক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৬ নম্বর বুথে তখন ৩৬১টি ভোট পড়েছে। হঠাৎ নজরে পড়ে একজন প্রার্থীকে ভোট দিলেও আলো জ্বলছে দুই জায়গায়। ভোট কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। পরে ওই ইভিএম সিল করে পুনরায় ভোট শুরু হয়। সামসেরগঞ্জের বানিচাঁদ বিদ্যালয়ের ৩২ নম্বর বুথে একটা ভোট পড়ার পরেই ইভিএম খারাপ হয়ে যায়। তিন ঘণ্টা ভোট বন্ধ থাকে। পরে নতুন ইভিএম আসে। হাসিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০৬ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ হয়ে যায়। দু’ ঘণ্টা পর নতুন ইভিএম এলে ভোট শুরু হয়। ইভিএম বিকল হয়ে যাওয়ায় এ দিন বেশ কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ-পর্ব বন্ধ ছিল খড়গ্রাম বিধানসভা এলাকার মহম্মদপুর, শঙ্করপুর, ভালকুণ্ডি, মুর্চা, সাউপাড়া, রহিগ্রামে। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের হরিহরপাড়ার চোঁয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৪২ নম্বর বুথে ইভিএমে একটা বোতাম টিপলে চারটে করে আলো জ্বলছিল। ১৫৪টি ভোট পড়ার পরে তা নজরে এলে ইভিএম বদল করা হয়। এর জন্য ভোটে কিছুটা দেরিও হয়। মুর্শিদাবাদের কংগ্রেসের প্রার্থী মান্নান হোসেনের অভিযোগ, “ইভিএমে ব্যাপক কারচুপি করার চেষ্টা করেছিল শাসক দল। কিন্তু শুরুতেই বিষয়টি জানতে পেরে নির্বাচনে কমিশনের দারস্থ হই। কমিশনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটে যায়।”


লালবাগে মহিলা
পরিচালিত ভোটকেন্দ্র।


ক্যামেরা লাগানো গাড়ি ঘুরছে বুথে।
দফতরে বসে তারই নজরদারি।

অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের প্রার্থী মহম্মদ আলি পাল্টা বলেন, “ডোমকলের আইসি-র সহযোগিতায় এবং নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ মদতে ডোমকলের প্রায় ৩৭টি বুথে ভোট অবাধে সম্পন্ন হতে পারেনি। তার মধ্যে ১২টি বুথ কংগ্রেস দখল করে নেয়। নির্বাচনের কমিশনের কাছে বেশ কয়েকটি বুথে পুনরায় ভোটের দাবি জানিয়েছি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে সিপিএমও। মুর্শিদাবাদের সিপিএমের প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান বলেন, “ডোমকলের ৭-৮টি বুথে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়নি কংগ্রেসের লোকজন। এমনকী তাদের ভয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি ভোটাররা। ওই বুথগুলিতে পুনরায় ভোটের দাবি জানিয়েছি।”

ছোটখাটো গোলমাল আরও হয়েছে। ডোমকলের গড়াইমারিতে বোমাবাজি হয়েছে। রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভার রায়চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮০ ও ৮২ নম্বর বুথে প্রচার চলছে অভিযোগ তুলে উত্তেজনা চড়ায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অতি স্পর্শকাতর সেকেন্দ্রার লালখান্দিয়ার গ্রামে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে রঘুনাথগঞ্জ থানার আইসি টহল দেন গোটা গ্রাম। খড়গ্রামের তৃণমূলের অভিযোগ, কল্যাণপুরে মুসা শেখ নামে তাদের এক সমর্থককে আধাসেনারা লাঠি উঁচিয়ে এমন তাড়া করে যে ওই যুবকের হাত ভেঙে যায়। অন্য দিকে ওই বিধানসভা কেন্দ্রেরই এড়োয়ালির জটারপুর এলাকায় দু’জন তৃণমূলের এজেন্টকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে আধাসেনাদের বিরুদ্ধে। পারুলিয়া অঞ্চলের কেশিয়াডাঙা ও সাদল অঞ্চলের শুরখালি বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম। বামেরা এই অবস্থার জন্য কংগ্রেসের সন্ত্রাসকে দায়ী করলেও কংগ্রেসের বিধায়ক আশিস মার্জিত সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

এরই মধ্যে ডোমকলের কুশাবাড়িয়া এলাকার ১০১ নম্বর বুথে ভোটকর্মীদের খাবার পরিবেশন করেছেন কংগ্রেসের এজেন্ট। এমনই অভিযোগে সরিয়ে দেওয়া হল ওই বুথের মাইক্রো অবজার্ভার, প্রিজাইডিং অফিসার সহ মোট পাঁচ জনকে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “ওই বুথে একজনই এজেন্ট ছিলেন। তিনি কংগ্রেসের। ভোটকর্মীদের তিনিই খাবার পরিবেশন করেছিলেন বলে একটি অভিযোগ আসার পরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” কংগ্রেসের ওই এজেন্ট আমজাদ হোসেন অবশ্য বলেন, “এটা মিথ্যে অভিযোগ।”

ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

poll in murshidabad ignoring heat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE