Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

টানা বৃষ্টিতে ভাসল ধুলিয়ান শহর

বর্ষার শুরুতেই বিপত্তি। টানা বৃষ্টিতে ভাসল ধুলিয়ান শহর। ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকাই জলের তলায়। এক সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে রমজানের রোজা। হঠাৎ বৃষ্টিতে এভাবে শহরের বিশাল অংশ জলমগ্ন হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃষ্টির এই জমা জল কবে সরিয়ে ফেলা যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনও আশ্বাস দিতে পারেনি তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ধুলিয়ান পুরসভা। উপ-পুরপ্রধান দিলীপ সরকার বলেন, “প্রাচীন পুরসভা এলাকার অপরিকল্পিত নগরায়ন এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

পানীয় জলের খোঁজে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

পানীয় জলের খোঁজে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

বর্ষার শুরুতেই বিপত্তি। টানা বৃষ্টিতে ভাসল ধুলিয়ান শহর। ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকাই জলের তলায়। এক সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে রমজানের রোজা। হঠাৎ বৃষ্টিতে এভাবে শহরের বিশাল অংশ জলমগ্ন হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।

বৃষ্টির এই জমা জল কবে সরিয়ে ফেলা যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনও আশ্বাস দিতে পারেনি তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ধুলিয়ান পুরসভা। উপ-পুরপ্রধান দিলীপ সরকার বলেন, “প্রাচীন পুরসভা এলাকার অপরিকল্পিত নগরায়ন এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তার উপর আগের বাম পুরকর্তারা কোনও কাজ করে যাননি। তাই নিকাশি সমস্যা এতটা দুর্ভোগে ফেলছে মানুষকে।” জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলিতে এখনও পর্যন্ত যে নিকাশি নালা তৈরি করা হয়নি, তা মেনে নিয়েছেন দিলীপবাবু। তবে তাঁর দাবি, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগীরথীর পাড়ে শ্মশানের কাছে একটি পাম্প বসানো হয়েছে জমা জল সরানোর জন্য। ইদের আগে জমা জল সরাতে বাড়তি পাম্প বসানো হবে। গোটা ধুলিয়ান শহরের ১৯টি ওয়ার্ডকেই নিকাশি নালার অধীনে এনে একটি প্রকল্প রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটা অনুমোদন পেলেই জমা জলের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে আশা উপপুরপ্রধানের।

সিপিএমের সুন্দর ঘোষ দীর্ঘ ২৫ বছর কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি বলেন, “ধুলিয়ানে এভাবে জল জমার ঘটনা নতুন নয়। তবে আগে জল বেরিয়ে যেতে পারত দ্রুত। শহরের আশপাশ এলাকাগুলি বেশিরভাগই ছিল ফাঁকা। এখন সেই সব জায়গায় ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। শহরের জল বেরোতে পারছে না। বামেদের দোষ দিয়ে তৃণমূল পুরবোর্ড এখন নিজেদের অপদার্থতাকে ঢাকতে চাইছেন”

শহরের জলমগ্ন এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে ৮, ১০, ১১, ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। জলবন্দি বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পানীয় জল নিয়ে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে নার্গিস বিবির উঠোনে এখনও এক হাঁটু জল। পাশের নলকূপটি জলে ডুবে রয়েছে। তাঁর কথায়, “ জল ছাড়া চলে কি করে? বাধ্য হয়ে দূরের কোনও নলকূপ থেকে জল এনে কাজ করতে হচ্ছে।” ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বৃদ্ধ আমিন শেখের গলায় ঝরে পড়ল ক্ষোভ, “চার দিন ধরে জলে ডুবে আছি আমরা। কেউ একবারও খোঁজ নিতে আসেনি। এর আগেও বৃষ্টিতে জমা জলে কাটাবার অভিজ্ঞতা এলাকার বাসিন্দাদের রয়েছে। কিন্তু তখন পাম্প বসিয়ে জমা জল তুলে ফেলারও ব্যবস্থা হত।” আমিন শেখ জানান, পুরসভা থেকে আগে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হত, এখন তা-ও হয় না।

রোজার মাসে এভাবে জলে ডুবে থাকার ভোগান্তিতে মানুষ এতটাই ক্ষিপ্ত যে শনিবার সন্ধেয় এলাকার এক তৃণমূলের মহিলা কাউন্সিলারের স্বামীকে বাড়ি ফেরার পথে রীতিমতো হেনস্থা হতে হয়েছে বাসিন্দাদের হাতে। বাসিন্দাদের দাবি, বেশি করে পাম্প বসিয়ে বা যে করেই হোক জমা জল সরাতে হবে, পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে ক্ষিপ্ত বাসিন্দাদের হাত থেকে উদ্ধার করে তাঁকে। অবশ্য উপ-পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘এত তাড়াতাড়ি জমা জল কোনও ভাবেই সরানো সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এত মানুষ এ ভাবে জলের মধ্যে আটকে রয়েছেন দেখে আমরাও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।”

সবে বর্ষা শুরু। দু’দিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে যদি এই অবস্থা হয়, ভরা বর্ষায় দুর্ভোগ কোথায় দাঁড়াবে, সেটাই চিন্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dhuliyan continuous rain causes water logging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE