Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দেহ নামাবে কে, স্টেশনে দাঁড়িয়ে ট্রেন

দিন-দুপুরে ট্রেনের কামরায় মিলল মৃতদেহ। আতঙ্কিত যাত্রীরা স্টেশন ম্যানেজারকে খবর দিয়েছিলেন সঙ্গে-সঙ্গে। কিন্তু ট্রেনের কামরা থেকে কে দেহ নামাবে, তাই নিয়ে রেলকর্মী ও রেল পুলিশের টালবাহানায় মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর রোড স্টেশনে সোমবার দুপুরে টানা দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল ভাগলপুর-আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। শেষ পর্যন্ত রেল পুলিশের অনুরোধে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গের একজন হরিজন কর্মীকে স্টেশনে পাঠিয়ে ট্রেনের কামরা থেকে মৃতদেহ নামানোর ব্যবস্থা করা হয়।

ট্রেন থেকে নামামো হচ্ছে দেহ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

ট্রেন থেকে নামামো হচ্ছে দেহ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৬
Share: Save:

দিন-দুপুরে ট্রেনের কামরায় মিলল মৃতদেহ। আতঙ্কিত যাত্রীরা স্টেশন ম্যানেজারকে খবর দিয়েছিলেন সঙ্গে-সঙ্গে। কিন্তু ট্রেনের কামরা থেকে কে দেহ নামাবে, তাই নিয়ে রেলকর্মী ও রেল পুলিশের টালবাহানায় মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর রোড স্টেশনে সোমবার দুপুরে টানা দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল ভাগলপুর-আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। শেষ পর্যন্ত রেল পুলিশের অনুরোধে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গের একজন হরিজন কর্মীকে স্টেশনে পাঠিয়ে ট্রেনের কামরা থেকে মৃতদেহ নামানোর ব্যবস্থা করা হয়। মৃতদেহটি কোথা থেকে, কী ভাবে ট্রেনের ওই কামরায় এল, তা বলতে পারছেন না যাত্রীরা। মৃতের পরিচয়ও জানা যায়নি।

সকালে ট্রেনটি ভাগলপুর থেকে রওনা দিয়েছিল। ট্রেনের চালক সন্তোষ কুমার সাহু বলেন, “প্রায় ৬ ঘণ্টার পথ এসেছি। কিন্তু কামরায় মৃতদেহ রয়েছে বলে কেউ আমাকে জানায়নি। সুজনিপাড়া স্টেশনেই প্রথম খবরটা কানে আসে।” যাত্রীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বেলা ১২ নাগাদ সুজনিপাড়া স্টেশনে দুই মহিলা ওই কামরায় উঠে দুর্গন্ধ পান। তাঁরাই পাশের কামরায় গিয়ে খবর দেন অন্য যাত্রীদের। ইতিমধ্যে ট্রেন পৌঁছয় পরের স্টেশন আহিরণে। কামরায় মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ট্রেনেই। জঙ্গিপুর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটি এসে দাঁড়াতেই যাত্রীরা ভয়ে ট্রেন থেকে নামতে শুরু করেন। খবর দেওয়া হয় স্টেশন ম্যানেজারকে। স্টেশন ম্যানেজার খবর দেন রেল পুলিশকে। কিন্তু ট্রেনের কামরা থেকে কে নামাবে মৃতদেহ, তাই নিয়ে দুই তরফে শুরু হয়ে যায় চাপানউতোর। স্টেশন ম্যানেজার সঞ্জীবকুমার বলেন, “আমি কামরায় মৃতদেহ আছে খবর পেয়েই তা রেল পুলিশকে জানাই। রেল পুলিশের ইন-চার্জ প্রথমে জানান স্টেশন ম্যানেজার হিসেবে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে লিখে দিলে তবেই মৃতদেহে হাত দেবেন তাঁরা। আমি তো চিকিৎসক নই যে কাউকে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দেব।” তখন রেলপুলিশ জানায়, কামরায় মৃতদেহ পড়ে থাকার কথা যাত্রীরা জানিয়েছে বলে অন্তত স্টেশন ম্যানেজারকে লিখে দিতে হবে। স্টেশন ম্যানেজার সেই মতো লিখেও দেন।

এই সবেই কেটে যায় ঘণ্টাখানেক। ট্রেন তখনও জঙ্গিপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে। যাত্রীরা দাবি করেন, মৃতদেহ ট্রেনের কামরা থেকে প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে নিয়ে ট্রেনটি ছাড়ার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সঞ্জীববাবুর সাফ কথা, “আমি ডোম কোথায় পাব যে মৃতদেহ নামাবো। ওটা রেল পুলিশের দায়িত্ব।” রেল পুলিশের জঙ্গিপুরের আই সি স্বপন কুমার দাস বলেন, “আমাদের কাছে ডোম নেই। তাই ট্রেন থেকে মৃতদেহ নামাবো কী ভাবে?”

চাপানউতোর চলতে থাকে আরও কিছুক্ষণ। পরে রেল পুলিশের অনুরোধে জঙ্গিপুর পুলিশ মর্গ থেকে একজন ডোমের ব্যবস্থা হলে ট্রেন থেকে নামে মাঝবয়েসি ধুতি ও জামা পরা ওই ব্যক্তির দেহ। এরপরই জঙ্গিপুর স্টেশন ছাড়ে প্রায় ফাঁকা যাত্রীহীন ট্রেনটি। রেল পুলিশ জানায়, অপরিচিত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, তা ময়না-তদন্তের পরেই বলা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dead body nobody at the station raghunathganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE