নতুন বইয়ের গন্ধের সঙ্গে মিশে যায় পুজোর গন্ধ। এ বারেও একগুচ্ছ শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ পড়শি দুই জেলা থেকে। তাতে বিষয় বৈচিত্র্যের পাশাপাশি লেখক তালিকাও রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। কবি, লেখকদের কেউ তাঁত শ্রমিক, কেউ দিনমজুর, কেউ আবার গৃহবধূ। কিন্তু দিনের শেষে দু’এক পাতা গদ্য বা কবিতা লেখা ওঁদের নেশা। শান্তিপুর থেকে প্রকাশিত ‘প্রতিবাদী চেতনা’ পত্রিকার বিশেষ শারদ সংখ্যায় এমনই কিছু মানুষের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গে আছে কবিতা, গদ্য এবং প্রবন্ধ। ৩৫ বছর ধরে বিপ্লব দাশগুপ্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে পাক্ষিক পত্রিকাটি। প্রস্তুত হচ্ছে সত্যনারায়ণ গোস্বামীর সম্পাদনায় ‘প্রতিচ্ছবি’ পত্রিকার বিশেষ পর্যটন সংখ্যা। আবার করিমপুরের ষান্মাসিক ‘দর্পণ’ পত্রিকার এ বারের শারদ সংখ্যার বিষয় ‘মাঝি’। মোট ৫টি গদ্য রয়েছে মাঝিদের নিয়ে। সম্পাদক দেবজ্যোতি কর্মকার জানান, এ বারের শারদ সংখ্যায় করিমপুরের অশ্বিন ঘাট, দোগাছি ঘাট, এবং দুর্লভপুরের মহিষমারি ঘাটের তিন জন মাঝির সাক্ষাৎকার থাকছে। সঙ্গে কবিতা গল্প এবং পত্রপত্রিকার সমালোচনা। প্রকাশিত হয়েছে তেহট্ট থেকে তপনকুমার বিশ্বাস সম্পাদিত ‘সাহিত্য অঙ্গন’ এবং পলাশিপাড়ার সাহেবনগর থেকে প্রণব বিশ্বাসের সম্পাদনায় ‘কৃষ্টি’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা।
পুজো মণ্ডপে দেওয়াল পত্রিকা বড় একটা দেখা যায় না। করিমপুর আনন্দপল্লির আনন্দপীঠ পুজো মণ্ডপ এবার সেজে উঠছে দেওয়াল পত্রিকায়। নাম ‘আনন্দমঠ’। অন্য দিকে, নাটনার উদয়ন সঙ্ঘের প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুজো মণ্ডপে প্রতি বছরের মতো এ বারও দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশের তোড়জোড় চলছে। কৃষ্ণনগর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ‘আদমের’ ১৮তম বছরের শারদ সংখ্যা। সম্পাদক গৌতম মণ্ডল জানান, এ বারে ‘সম্মাননা সংখ্যা’ হচ্ছে। এপার ওপার দুই বাংলার কয়েকজন নবীন-প্রবীন কবি, শিল্পী, সাহিত্যকর্মীদের সম্মাননা দেওয়া হবে পত্রিকার তরফ থেকে। তাঁদের লেখা জীবনী দিয়ে সাজানো হচ্ছে এবারের ‘আদম’। ১৯৭৪ সালে চাপড়া থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কালচাঁদ রায়ের সম্পাদনায় সাহিত্য পত্রিকা ‘সোনালী জীবন’। একটানা ৪০ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে চলেছে পত্রিকাটি। তবে সম্পাদক বর্তমানে কৃষ্ণনগরে থাকেন। তাই পত্রিকাটি জেলা সদর থেকেই প্রকাশিত হয়। চাপড়া থেকে ৩৩ বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে ‘আনন্দম’। বছরে চারটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সম্পাদক রামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঠিক পুজো সময় আমরা কোনও সংখ্যা বের করি না। নভেম্বর সংখ্যার কাজ চলছে।”
নবদ্বীপ থেকে প্রকাশিত হওয়ার পথে ‘রামধনুর’ শারদ সংখ্যা। সপ্তম বর্ষে পা দেওয়া এই পত্রিকার সম্পাদক জয়দেব দাস জানান, গল্প, কবিতা, রম্যরচনার চেনা বিষয়সূচির বাইরে গিয়ে এই পত্রিকায় প্রধানত গুরুত্ব দেওয়া হয় ইতিহাস এবং লোকসংস্কৃতিকে। পুজো ছাড়া নববর্ষে প্রকাশিত হয় ষাণ্মাসিক এই পত্রিকার অন্য সংখ্যাটি। লেখালেখির জগতে একেবারে নতুনদের হাতেখড়ি দেওয়ার পত্রিকা ‘শব্দশৈলী’। পত্রিকার দশম বর্ষের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। প্রস্তুতি শেষের পথে বিকাশ বসুর সম্পাদনায় ‘সাহিত্য শৈলী’। গল্প, প্রবন্ধ, কবিতায় সাজানো ত্রৈমাসিক পত্রিকাটির এবার পঞ্চম বর্ষ। কিছুদিন বিরতির পর আবার শারদ সংখ্যা বের হচ্ছে ‘ইচ্ছে ডানা’র। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের নবদ্বীপ শাখার মুখপত্র ‘মুক্তবাণী’ প্রকাশের পথে।
নবদ্বীপ সংলগ্ন পূর্বস্থলীর পারুলিয়া থেকে দীপঙ্কর চক্রবর্তীর সম্পাদনায় ‘পিলসুজ’ পত্রিকা ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে। কবিতা পত্রিকাটির শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। পারুলিয়া থেকে প্রকাশিত হয়েছে ছড়ার পত্রিকা ‘ছয়লাপের’ দ্বিতীয় সংখ্যা। ২১টি ছড়া সম্বলিত পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন স্বপন চক্রবর্তী।
অন্য দিকে মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থের আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা শুরু হয়েছে মহালয়ার দিন থেকে। ইতিমধ্যে ডজন খানেক পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশের তাগিদে ছাপাখানায় রয়েছে আরও অন্তত ডজন খানেক। মহালয়ার সন্ধ্যায় বহরমপুর শিল্পতালুকের জলসাঘরে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে অভিজিৎ রায় ও প্রকাশ দাস বিশ্বাস সম্পাদিত ‘আকাশ’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা। ওই বিশেষ সংখ্যাটি বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষেক তথা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ‘সৌম্যেন্দ্রকুমার গুপ্ত সম্মাননা সংখ্যা’ হিসাবে রচিত। ওই সংখ্যায় রয়েছে ‘সৌমেনবাবু’- কে নিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতি-রাজনীতি জগতের কৃতীদের লেখা ১৭টি প্রবন্ধ ও দু’টি সাক্ষাৎকার। রয়েছে সৌমেনবাবু’র লেখা ৫টি প্রবন্ধ, একটি গল্প, একটি ভ্রমনকথা ও একটি স্মৃতিকথা। জলসাঘরের ওই অনুষ্ঠানেই প্রকাশিত হয়েছে ‘আকাশ’ প্রকাশনার ‘মুর্শিদাবাদ চরিতাভিধান’। ওই গ্রন্থের লেখক প্রকাশ দাস বিশ্বাস। ‘মুর্শিদাবাদ চরিতাভিধান’-এ তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার ছয় শতাধিক কৃতীজনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছেন। প্রচ্ছদশিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত।
মহালয়ার পরদিন বুধসন্ধ্যায় জিয়াগঞ্জের ‘দিগম্বর জৈন ধর্মশালায়’ অনুষ্ঠিত হয় সমীর ঘোষ সম্পাদিত ‘অনুভব’ পত্রিকার শারদসংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠান। ওই সংখ্যায় ৫টি প্রবন্ধ, ৬টি গল্প, ২৫টি কবিতা ও একটি রম্যরচনা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে ভাগীরথী পাড়ের যমজ শহর জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ নিয়ে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব, ধর্ম, রাজনীতি-সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে গুণিজনদের লেখা ২৫টি প্রবন্ধ রয়েছে অনুভবের শারদসংখ্যায়। ওই দিনের অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা হৈমন্তী সরকারের গাওয়া মুর্শেদি ও দেহতত্ত্বের গানে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়েছেন। ‘অনুভব’-এর শারদসংখ্যার প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন কবি সমীরণ ঘোষ। বহরমপুর থেকে প্রকাশিত কবি উৎপলকুমার গুপ্ত সম্পাদিত ‘সময়’ পত্রিকার শারদ সংখ্যাটি একই সঙ্গে ৪৭তম বর্ষপূর্তি সংখ্যাও বটে। ওই পত্রিকায় রয়েছে ৬টি প্রবন্ধ, ১৬টি গল্প এবং কবি শঙ্খ ঘোষ- সহ ৩৫ জনের কবিতা। প্রচ্ছদ অজয় গুপ্ত।
প্রকাশিত হয়েছে কেয়া চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘শাব্দ’ পত্রিকার শারদসংখ্যা। ওই সংখ্যায় রয়েছে ৪টি প্রবন্ধ, ৫টি অনুগল্প, ১০টি ছোটগল্প, ১টি নাটক, ১টি উপন্যাস ও কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী-সহ ২২ জনের কবিতা। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করেছেন কল্যাণ চৌধুরী। আর এক সম্পাদিকা নিলীমা সাহার ‘নিনি’ পত্রিকার শারদসংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে সপ্তমীতে। ওই পত্রিকায় রয়েছে এক গুচ্ছ মৌলিক কবিতা ছাড়াওকবি গুলজারের ৩টি ঊর্দু কবিতার বাংলায় ভাষাম্তর, একটি দীর্ঘ কবিতা ও নিলীমা সাহার ‘ব্যক্তিগত গদ্য’। পত্রিকার অলঙ্করণ ও অন্তরসজ্জা করেছেন দুই কবি নিখিলকুমার সরকার ও কৌশিক গুড়িয়া। প্রচ্ছদ এঁকেছেন আর এক কবি নাসের হোসেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে রেখে রঘুনাথগঞ্জের তরুণী পারভিন খাতুন প্রকাশ করেছেন তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘সৃষ্টি’। রঘুনাথগঞ্জের একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে ‘সৃষ্টি’র প্রকাশনার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও অতিথি ও শিল্পীরা এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকেও। ‘সৃষ্টি’র ওই সংখ্যায় রয়েছে ৩টি প্রবন্ধ, ৫টি গল্প, ১৬টি কবিতা।
ক্ষীণ কলেবর হলেও শারদসংখ্যার ঐতিহ্যে পা মিলিয়েছে কুশলকুমার বাগচী সম্পাদিত পত্রিকা ‘শব্দমৌলি’ ও গোপাল বাইন সম্পাদিত কবিতাপত্র ‘ঘাটপেরিয়ে’। প্রকাশিত হয়েছে শামল দাস সম্পাদিত পত্রিকা ‘তমস’ ও দেবব্রত সরকার সম্পাদিত ‘স্বপ্নসিঁড়ি’। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবি সমীরণ ঘোষের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁই আমাকে ওড়াও’। ‘ভাষাবন্ধন’ থেকে প্রকাশিত দৃষ্টিনন্দন ওই কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছেন প্রখ্যাত চিত্রকর হিরণ মিত্র। তিনি যে ভাল অনুবাদকও তাঁর পরিচয় দিয়েছেন কবি সমীরণ ঘোষ নিজেই। প্রকাশিত হয়েছে কবি সমীরণ কৃত রুশ নাট্যকার গ্রিগোরি গোরিনের নাটক ‘সুইফট নির্মিত প্রাসাদ’ (ভাষাবন্ধন)- এর বাংলায় ভাষান্তর। এছাড়াও বেশ কিছু শারদীয় পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থ এখনও প্রকাশের অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy