Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙন রোধে কাজ হলেই সাহায্য মিলবে সান্যালচরের

ভাঙন সমস্যায় জেরবার লোকজন বিদ্যুতের কাজ করতে দেননি এলাকায়। গ্রামবাসীদের বোঝাতে মঙ্গলবার দুপুরে নদিয়ার চাকদহ থানার চান্দুরিয়া ২ পঞ্চায়েতের সান্যালচর এলাকা পরিদর্শনে গেলেন জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিদল। সেখানে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পরে গাছতলায় আলোচনায় বসতে হল তাদের। তবে কথাবার্তাই সার। না ভাঙন রোধে সুস্পষ্ট কোনও আশ্বাস পেলেন গ্রামবাসী, না বিদ্যুতের কাজে সহযোগিতার সমর্থন পেল প্রশাসন।

সান্যালচরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় প্রশাসনিক কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।

সান্যালচরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় প্রশাসনিক কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

ভাঙন সমস্যায় জেরবার লোকজন বিদ্যুতের কাজ করতে দেননি এলাকায়। গ্রামবাসীদের বোঝাতে মঙ্গলবার দুপুরে নদিয়ার চাকদহ থানার চান্দুরিয়া ২ পঞ্চায়েতের সান্যালচর এলাকা পরিদর্শনে গেলেন জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিদল। সেখানে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পরে গাছতলায় আলোচনায় বসতে হল তাদের। তবে কথাবার্তাই সার। না ভাঙন রোধে সুস্পষ্ট কোনও আশ্বাস পেলেন গ্রামবাসী, না বিদ্যুতের কাজে সহযোগিতার সমর্থন পেল প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কমবেশি ৪০ বছর ধরে ওই এলাকায় ভাগীরথীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ১৯৭৭ সালে চান্দুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩টি বুথ ছিল। এখন সেটা কমতে-কমতে মাত্র পাঁচটি বুথে এসে ঠেকেছে। এক সময় এখানে ভোটার ছিল সাড়ে চোদ্দো হাজারের বেশি। এখন হয়েছে সাড়ে চার হাজার। বহু মানুষ এখান থেকে চাকদহ, শিমুরালী, পালপাড়া এবং হুগলি জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলে গিয়েছেন। হাজার-হাজার বিঘা চাষের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। চারটে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পঞ্চায়েতের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভাগীরথী এখন মালোপাড়া ও বিশ্বাসপাড়া এলাকায় ভাঙতে শুরু করেছে। এর মধ্যে মালোপাড়ার ভাঙন ভয়াবহ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার প্রশাসনে তদ্বির করেও লাভ হয়নি। তাই যখন প্রশাসন থেকে ওই এলাকায় আটটি বিদ্যুতের টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তখন বাধা দেন গ্রামবাসী। তাঁদের বক্তব্য, আগে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না করলে, ওই টাওয়ার বসাতে দেবেন না। সেই সময় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে শীঘ্র। গ্রামবাসীও বিক্ষোভ তুলে টাওয়ার বসানোর প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাঙন রোধের কাজ শুরু হয়নি। প্রশাসন কথা না রাখায় এরপর বিদ্যুতের কাজ একেবারে বন্ধ করে দেন গ্রামবাসী। রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের সহকারী মুখ্য বাস্তুকার বিশ্বনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “চার বছর থেকে এই সমস্যা ঝুলে রয়েছে। এখানে মোট আটটি টাওয়ার বসানোর কথা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি টাওয়ার বসানো সম্ভব হয়েছে। তিনটির ভিত তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আর সেভাবে কাজ এগোয়নি।”

আবার যাতে সেই কাজ শুরু করা যায়, সেজন্য এদিন প্রশাসনের একটি দল ওই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান। দলে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উৎপল ভদ্র, কল্যাণীর মহকুমাশাসক কস্তুরী বিশ্বাস, চাকদহের বিডিও বিপ্লব সরকার, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ দীপক কুমার বসু, চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হরপ্রসাদ হালদার, কল্যাণীর তৃণমূল বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস-সহ অন্যরা।

দুপুর ১২টা নাগাদ বাবুপাড়া থেকে ট্রলারে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে চান্দুরিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের ডাকাডাকিতে মধ্যপাড়ায় ট্রলার থেকে নেমে যায় প্রতিনিধিদল। স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে তাঁরা ট্রলারে উঠতে যান যখন, তখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামবাসীরা ডাকাডাকি শুরু করেন। প্রতিনিধিদল ফের ট্রলার থেকে নেমে নদীর পাড়ে একটি পিটুলি গাছের তলায় গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে ভাঙনে দুরবস্থার কথা বলতে-বলতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসী। তাঁদের আশ্বস্ত করতে গাছতলায় দাঁড়িয়ে বিধায়ক রমেনবাবু বলেন, “এখানে রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আগামিদিনে আরও কাজ হবে।”

তাঁর কথা শেষ হতে না হতে এক বাসিন্দা বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাস্তা হয়েছিল ঠিক। তবে তার বেশ খানিকটা অংশ ভাঙনে নদীবক্ষে চলে গিয়েছে। ভাঙন রোধ করতে না পারলে কোনও উন্নয়নই কাজে লাগবে না এখানে।” এক ধাপ এগিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রমেন বিশ্বাস বলেন, “ভাঙনের ফলে নদীর বিপরীত দিকে যে চর জেগে উঠেছে, তাতে আমাদের আধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়েছি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। আধিকারিকরা খালি আশ্বস্তই করেছেন। আমাদের কথা কেউ ভাবছে না।”

অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উৎপলবাবু বলেন, “সমস্যাগুলো মেটানোর চেষ্টা করা হবে। তবে, বিদ্যুতের টাওয়ার বসানোর কাজে সহযোগিতাও করতে হবে গ্রামবাসীকে।”

গ্রামবাসী অবশ্য আগের মতো শুকনো আশ্বাসে ভুলছেন না এবার। স্থানীয় বাসিন্দা চিত্ত বিশ্বাস, চিরঞ্জিত বিশ্বাসরা বলেন, “আগে ভাঙন রোধে কাজ হবে। তারপরেই বিদ্যুতের কাজ শুরু করতে দেব আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ranaghat erosion sanyal char
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE