ভোটের মরসুমে নদিয়া জেলার দুই ওসি ও এক আইসি এবং মুর্শিদাবাদের এক আইসি-র অপসারণ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হল। চার জনের বিরুদ্ধেই মূলত শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। নদিয়ার সিপিএম নেতা এস এম সাদি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ওদের কী কারণে সরিয়েছে স্পষ্ট না হলেও ওঁরা যে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ ছিল এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতা গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “আমি অপেক্ষা করছি কবে সিপিএম অভিযোগ করবে, জেলার ১৫ লক্ষ ভোটারের অধিকাংশই তৃণমূল প্রভাবিত। ওদের সরিয়ে দেওয়া হোক।”
বহরমপুর থানার আইসি অরুণাভ দাসের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগটা অবশ্য প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করার। মাসখানেক আগে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বহরমপুর থানা এলাকার রাধারঘাটে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন মাইক বাজিয়ে সভা করছিল। সেই সময় প্রশাসনের তরফ থেকে বহরমপুর থানার আইসি-কে সভাটি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। এর জন্য বহরমপুরের এসডিও সুপ্রিয় দাস তাঁকে শো-কজ করেছিলেন। মঙ্গলবার তৃণমূলের একটি মোটর বাইক মিছিল বন্ধ করার প্রশাসনিক নির্দেশ অগ্রাহ্যের অভিযোগ ওঠে অরুণাভবাবুর বিরুদ্ধে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় লাগোয়া বহরমপুর থানা এলাকায় জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে রোড শো-তে প্রচুর মোটর বাইক ছিল। তা জানার পরেই অবিলম্বে মিছিল বন্ধ করার জন্য বহরমপুরের বিডিও বর্ণমালা রায় যোগাযোগ করেন বহরমপুর থানার আইসি-র সঙ্গে। কিন্তু আইসিকে বারবার ফোনও করা সত্ত্বেও তিনি বিডিও-র কথায় কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে বিডিও এসএমএস-ও করেন আইসি-র মোবাইলে। বিডিও বর্ণমালা রায় বলেন, “আমি মোটর বাইক মিছিল বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বহরমপুর থানাকে জানাই। কিন্তু তারা কেন কোনও পদক্ষেপ করেনি তারাই বলতে পারবে।” মঙ্গলবারই আইসি অরুণাভ দাসকে বদলির নির্দেশ আসে।
নদিয়ার নাকাশিপাড়ার ওসি রাজা সরকার মাত্র দু’মাস আগে কৃষ্ণগঞ্জ থানা থেকে বদলি হয়ে এসেছিলেন। কৃষ্ণগঞ্জে থাকাকালীন মাজদিয়া কলেজে ছাত্রসংসদের নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। নাকাশিপাড়াতে আসার পরেও শাসকদলের হয়ে কাজ করার বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে। ভোটের আগে সক্রিয় দুষ্কৃতীদের তালিকা তৈরিতে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে। সিপিএমের অভিযোগ, সম্প্রতি বীরপুর এলাকা থেকে তাদের এক দলীয় সমর্থককে থানায় তুলে আনা হয় কারণ ছাড়াই। পরে ওই যুবককে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁর পরিবার বিষয়টি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানায়। যদিও পুলিশ সূত্রে এর সমর্থনে কোনও তথ্য মেলেনি।
চাপড়া থানার ওসি রক্তিম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এর আগে বেশ কয়েকবার পক্ষপাতের অভিযোগ করেছে বামেরা। পঞ্চায়েত ভোটের পরে বেদবেড়িয়া এলাকায় এক দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় তৃণমূলের মূল অভিযুক্তদের না ধরার জন্য থানার বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ করেছিল সিপিএম। সম্প্রতি চরমহৎপুরে লিবারেশনের এক কর্মী খুন ও ধুবুলিয়ার দুই ব্যাক্তিকে খুনের ঘটনাতেও ওসি-র বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে।
সিপিএম পক্ষপাতের অভিযোগ করেছিল অপসারিত কল্যাণী থানার আইসি তুষারকান্তি করের বিরুদ্ধেও।
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “এই ব্যাপারে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ছিল। সেটা পালন করেছি মাত্র।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy