উদ্ধার করা পাসপোর্ট। —ফাইল চিত্র।
জঙ্গি-যোগের অভিযোগ ছিলই। সঙ্গে দোসর ভুয়ো পাসপোর্ট চক্র।
মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে এখন তার রমরমা। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সুতোয় এখন সেই চক্রের যোগও ছানবিন করে দেখছেন গোয়েন্দারা।
দিন কয়েক আগেই জেলা পুলিশের জালে ধরা পড়েছিল ওই চক্রের কয়েক জন পাণ্ডা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সীমান্ত উজিয়ে ‘সেফ প্যাসেজ’ খুঁজে এ দেশে অনুপ্রবেশের জন্য মুর্শিদাবাদকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে কেন? গোয়েন্দাদের ব্যাখ্যা, ভুয়ো পাসপোর্টের বোলবোলাও যেখানে বেশি, অনুপ্রবেশের হিড়িক পড়ে সেখানেই। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ ও জেলা-গোয়েন্দা বিভাগের একটা অংশ এর সঙ্গে জড়িত কিনা, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
গত ১০ জুলাই বহরমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়কের চুনাখালি মোড় থেকে পাঁচ যুবককে আটক করেছিল পুলিশ। জেরায় জানা গিয়েছে তারা--ঢাকার আবু সালেম মহম্মদ, নবাবগঞ্জের জাহির হোসেন, মাদারিপুরের নুরুল ইসলাম, মেহেদি হাসান ও সাহিল হোসেন। সদ্য অনুপ্রবেশের পরে পাসপোর্টের জন্য স্থানীয় ‘দালাল’ খুঁজছিল তারা। পুলিশের কাছে তারা জানায়, সাইফুল শেখ নামে এক স্থানীয় গ্রামবাসীর কুতবাপুকরের ঠিকানা দেখিয়ে অন লাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদনও জমা দিয়েছে তারা।
জেলা জুড়ে জাল পাসপোর্ট চক্রের কথা মেনেও নিয়েছিলেন সদ্য-প্রাক্তন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, “জাল চক্রের তৈরি পাসপোর্ট দেখে বোঝার উপায় থাকে না নকল।” ধৃতদের জেরা করে, বাংলাদেশিদের ভারতীয় নাগরিক সাজিয়ে পাসপোর্ট তৈরির বড়সড় একটি চক্রের হদিশও সে সময়ে পেয়েছিল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই যুবককে, তাহেদুল শেখ এবং সাইফুল শেখ। তাদের ডেরা থেকে পুলিশ ৩৩টি ভুয়ো পাসপোর্ট, একটি কম্পিউটার, বেশ কিছু নকল ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই উদ্ধার করেছিল।
পাসপোর্ট যাচাইয়ের জন্য জেলায় রয়েছে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ। ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রের ওই চাঁইদের গ্রেফতারের পরে ওই গোয়েন্দা বিভাগের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পাসপোর্টের আবেদন যাচাইয়ের জন্যর্ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা দফতরে। সরেজমিন তদন্তের পর গোয়েন্দা দফতরের ছাড়পত্র মিললে তবেই হাতে পাওয়া যায় পাসপোর্ট। ওই তদন্তের জন্য প্রতিটি থানায় রয়েছে এক জন কনস্টেবল। তাঁদের মাথার উপরে, ডিআইবি-র এক এএসআই এবং এক জন এসআই পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। রয়েছেন ৩ জন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসারও। গোয়েন্দা দফতরের পরিভাষায় যাঁরা যথাক্রমে, ডিআইও-১, ২ এবং ৩। ওই বিভাগের দায়িত্ব রয়েছেন একজন ডিএসপি (ডিআইবি)। সর্বোপরি রয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। এতগুলো স্তর পেরিয়ে কী ভাবে বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট করিয়ে দিব্যি বারতীয় নাগরিকের তকমা জুটিয়ে ফেলছেন, সন্দেহ দানা বেঁধেছে তা নিয়েও।
জেলা পুলিশের দায়িত্ব নিয়েছেন সি সুধাকর। তাঁর কথায়, “আমি সবে দায়িত্ব নিয়েছ। ফলে ওই বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না।” তবে জেলা গোয়েন্দা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “পূর্বতন এক ডিএসপি-র (ডিআইবি) মদতে তদন্ত করাটাই উঠে গিয়েছে প্রায়। তদন্তের বদলে এখন ‘কোটা’ প্রথা চালু হয়েছে।” সেটা কী? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘কোটা’ মেনে পাসপোর্টের আবেদনকারীর গুরুত্ব অনুসারে এক হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা খসালেই পাসপোর্ট দফতরে পৌঁছে যাবে গোয়ান্দা দফতের ছাড়পত্র। সরকারি ভাষায় যার নাম, পিভিআর, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোট’। তারপরে আর দেখে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy